দেবহাটার ইছামতি নদীর ভাঙ্গনে বদলে যাচ্ছে মানচিত্র, হুমকির মুখে রুপসী ম্যানগ্রোভ
মোঃ রিয়াজুল ইসলাম আলম,, দেবহাটা প্রতিরনিধি।। সাতক্ষীরার দেবহাটা ইছামতি নদীর বিরামহীন ভাঙনে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের ভূ-খন্ড। একসময়ের ঐতিহ্য আর ইতিহাসের স্বাক্ষী দেবহাটা তথা দেশের ভূখন্ড হারানোর সাথে সাথে পরিবর্তন, পরিবর্ধন আর সংকুচিত হচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্র। এক সময়ের ইতিহাস ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির প্রতিমুখ সোনালী অতীতের মুখছায়া ইছামতি ছিল ব্যবসা নির্ভর নৌপথ। যার কারনে এখানে গড়ে উঠেছিল বানিজ্যিক কেন্দ্র, স্থাপিত হয়েছিল টাউনশ্রীপুর পৌরসভা। যেটি ছিল তৎকালীন সময়ে দেশের মধ্যে চতুর্থ পৌরসভা। ইছামতি নদীর কল্যাণে অর্থনীতিতেও বইছিল সুবাতাস। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের নদী শাসন, নদী ভাঙন রোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আর অন্যদিকে ইছামতি নদীর ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কালক্ষেপন, অদুরদর্শিতা, অনিয়ম, দূর্নীতি সর্বোপরি কোন কোন অংশে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিবেশী দেশের বাঁধা প্রদানসহ বিভিন্ন কারণে বিগত দিনগুলোতে ভেঙেছে ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধ। ফসলি জমি, জনপথ স্থাপনা, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইছামতির করাল গ্রাসে শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত বিভক্তিকরণ ইছামতি নদী বর্তমান সময়ে হাজারো সীমান্ত পারের গ্রামবাসির উদ্বেগ, আতঙ্ক আর হুমকির কারণে পরিণত হয়েছে। আর বিগত সময়ে এই প্রবল ভাঙনের করাল গ্রামে ইছামতির গর্ভে তলিয়ে দেবহাটার রাজনগর নামে একটি মৌজার সমস্ত জমি। এই ভাঙ্গনের ফলে দেবহাটা তথা সাতক্ষীরার একটি মনোমুগ্ধকর নান্দনিক পিকনিট স্পট রুপসী ম্যানগ্রোভ, থানা ভবনটিও বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। সাতক্ষীরার সদর উপজেলার হাড়দ্দাহ, দেবহাটার কোমরপুর, ভাতশালা, টাউনশ্রীপুর, চরশ্রীপুর, সুশীলগাতি, উপজেলা সদর, বসন্তপুর, নাংলা এলাকার অধিকাংশ ভেড়িবাধ প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের কবলে আছে। এছাড়া উপজেলা সদরে সদ্য নির্মিত বহুতল থানা ভবন হুমকির মুখে রয়েছে। ইছামতির ভাঙন থানা ভবন হতে মাত্র কয়েক মিটার দূরবর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। যে কোন সময়ে থানা ভবন ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন সীমান্তপারের নদী ভাঙ্গনে অভিজ্ঞ ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী। ইতিমধ্যে কোমরপুরের সরকারি খাদ্য গুদাম, জাহাজঘাট ইছামতি ভক্ষণ করেছে। ঐতিহাসিক পীরের মাজার ভাঙন ছুঁই ছুঁই করছে। সর্বাপেক্ষা বেদনার বিষয় দেবহাটার রাজনগর নামক মৌজা বর্তমানে অস্তিত্বহীন। শতশত বিঘা জমি সমৃদ্ধ রাজনগর মৌজা ইছামতির করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে। বৃটিশ শাসনামলে এবং পাকিস্তান শাসনামলে রাজনগরের অস্তিত্ব সরকারি রেকর্ডপত্রে দৃশ্যমান। সীমান্ত এলাকার বয়োবৃদ্ধরা জানান, রাজনগর মৌজা নদীর বিপরীত অংশে জেগে উঠেছে। দেশের ভূখন্ড হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ইতিহাসের ঘটনা প্রবাহের সাথে তুলনা করছেন সীমান্ত পারের জনসমাজ। ইতিহাস খ্যাত এই নদীর গতিপথ বিপরীত দিক দিয়ে বন্ধ করে ইছামতির ভাঙন ত্বরান্বীত করেছে বলে অনেকের আশঙ্কা। তাই এখনই সময় সীমান্ত নদীর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নীতির প্রতিফলন ঘটিয়ে ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্র নিশ্চিতকরণ। প্রতিবেশী দেশ যেমন কংক্রীটের এবং অপরাপর উপাদানের মাধ্যমে ভাঙন রোধ করে বাংলাদেশকে ভাঙনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন মেগা প্রকল্প গ্রহণ। আর এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে না করে সেনাবাহিনীর মাধ্যমেই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত ভাঙন রোধ ব্যবস্থা সম্ভব বলে মনে করেন ভূক্তভোগী সীমান্তপারের জনসাধারণ। সীমান্তপারের মানুষের অভিযোগ মতে, প্রতিবছর ভাঙন রোধে কাজ হয় কিন্তু তা হরিলুট আর লুটপাটেরই চিত্র প্রকাশ পায়। বর্তমান সময়ে কোমরপুর রক্ষা বাঁধসহ তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্লক তৈরীর কাজেও চরম অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে কোমরপুরের একাধিক লোকজন জানিয়েছেন। ব্লক তৈরীতে অনিয়ম হওয়ার অন্যতম কারণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়কদের যোগসাজশ এবং গাফিরতি বলে জানান তারা। এবিষয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, রুপসী ম্যানগ্রোভ ও থানা এলাকার ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী বাধ নির্মানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক এবিষয়ে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহনের মন্ত্রনালয়ে পত্র পাঠিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ১/২ দিনের মধ্যে সরেজমিনে এসে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। ইউএনও আরো জানান, জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভাতশালা থেকে কোমরপুর পর্যন্ত স্থায়ী বাধ নির্মানে একনেকে পাশ হয়েছে বলে ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান জানান।

আপনার অনুভূতি কী?






