বার্ড হিটে বাড়ছে ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা।। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের সময় বার্ড হিটে দুর্ঘটনা বাড়ছে। ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বিশ্বব্যাপী গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। যেখানে বিশ্বের গড়প্রতি এক হাজার ফ্লাইটে ঝুঁকি শূন্য দশমিক ৫, সেখানে ঢাকায় এ হার ১ দশমিক ৭৩। বন্দুক ব্যবহার করে পাখি তাড়ানোর কাজে বিমানবন্দরে বার্ড শুটার (পাখি শিকারি) রয়েছেন । কিন্তু তাড়ানোর পরও পাখিরা ঘুরেফিরে বিমানবন্দর এলাকায় ভিড় করছে। ঢাকার আশপাশে উড্ডয়নরত উড়োজাহাজে পাখির আঘাতের (বার্ড হিট) বেশ কয়েকটি ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারপাশে কয়েকটি জলাশয় থাকায় সেখানে মাছ ও কীটপতঙ্গ খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি হাজির হয়। এ ছাড়া আশপাশের উচ্ছিষ্ট খাবার, রানওয়ের সবুজ ঘাসও পাখিদের পছন্দ। তাই সেখানেও তাদের বিচরণ থাকে। এ জন্য শীত এলেই শাহজালালে উড়োজাহাজ ওঠানামায় পাখির ধাক্কা লাগার আশঙ্কা বেশি থাকে। বিমান চলাচল-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকলে বেশি ক্ষতি ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। ইঞ্জিনের ফ্যান, ব্লেড ও স্পিনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া পাখির আঘাতের ঝুঁকি থাকলে পাইলটদেরও মানসিক চাপে থাকতে হয়। এয়ারলাইনসগুলো বলছে, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর ক্ষেত্রে মনিটরিং খুব একটা কার্যকর নয়। ফলে মাঝেমধ্যেই বার্ড হিটের ঘটনা ঘটছে। জানা যায়, গত চার বছরে বিভিন্ন বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের লন্ডনগামী অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারসহ দেশি-বিদেশি অন্তত সাতটি উড়োজাহাজ। এর মধ্যে শাহজালালে একদিনেই পৃথক দুটি পাখির আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে বিমানবন্দরে পাখির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইউএস-বাংলা, কাতার এয়ারওয়েজ ও আমিরাত এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানায়, গত বছরের শেষে পাখির আঘাতে তাদের দুটি ফ্লাইটের জরুরি অবতরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও উড়োজাহাজের প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়েছে। পাখির আঘাতে বিমানের ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজের যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে পাইলট উড্ডয়ন ঠেকাতে উড়োজাহাজে জরুরি ব্রেক করেন। এতে পেছনের চাকা ফেটে যায়। ওই ফ্লাইটের ব্যাংককগামী যাত্রী আলতাফ বলেন, এ ঘটনায় তারা অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তাদের ফ্লাইটটি প্রত্যাহার করা হয়। পরে তারা অন্য উড়োজাহাজে যাত্রা করেন। বিমানের ওই ব্যাংককগামী ফ্লাইট ছাড়াও একই দিনে ফ্লাই দুবাই এয়ারলাইনসের আরব আমিরাতগামী ফ্লাইটেও আঘাত হানে পাখি। সূত্র জানায়, গত বছর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৃথক দুটি উড়োজাহাজে পাখি আঘাত হানে। এতে বিমানের লন্ডনগামী ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের যাত্রা ব্যাহত হয়; ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। জানা গেছে, ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামার সময় ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজের সামনের অংশে আছড়ে পড়ে একটি পাখি। এতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। তবে ত্রুটি সারিয়ে ৭৩ যাত্রী নিয়ে বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পাখির আঘাত নিয়ে শুধু যাত্রীরাই নন, পাইলটরাও আতঙ্কে থাকেন । বিমানের একজন পাইলট জানান, বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর কাজে নিয়োজিত কর্মীদের দক্ষতায় ঘাটতি আছে। এতে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে, তার জবাবদিহি নেই। তাদের কার্যক্রমও পর্যবেক্ষণ করা হয় না। এ কারণে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণের সময় তারা পাখি আতঙ্কে থাকেন। তবে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরের আশপাশে ৮০-৮২ শতাংশ পাখি কালো ডানার চিল। আমরা তাদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছি, তবে এটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ নিরাপদ রাখতে আমরা পাখি তাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এ জন্য আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। অ্যাক্টিভ বার্ড কন্ট্রোলের জন্য ছুটির দিনসহ সব সময় পাখি তাড়াতে আমাদের সিভিল অ্যাভিয়েশনের বার্ডশুটার ও বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া প্যাসিভ বার্ড কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে পরোক্ষ ডিভাইস যেমন- ক্যামেরার মাধ্যমে ডিটেকশন, সাউন্ড ডিটেকশন, সাউন্ড রিপেলিং, লেজারগান ও ইরিটেটেড ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবস্থা আছে বিমানবন্দরে। দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে পাখির উৎসের জরিপ করা হচ্ছে বলে জানান মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরটি শহরের মাঝখানে হওয়ায় আমাদের যে পাখির উৎসগুলো আছে, সেগুলো স্থানান্তর করাই চ্যালেঞ্জ। এ জন্য আমরা এক বছর মেয়াদি একটি বিস্তারিত জরিপ করছি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশে পাখির যেসব উৎস আছে, সেগুলো অন্যদিকে কীভাবে সরানো করা যায়, সেই চেষ্টা আমরা করছি। এমনকি কোথায় কোথায় পাখির খাবারের উৎস, ওয়াটার বডি, মাছ, ডোবা-নালা আছে, বুচার শপ, ডাস্টবিন, রেস্টুরেন্ট আছে- সেগুলোও দেখা হচ্ছে। এসব উন্মুক্ত খাবারের উৎস পাখিদের আকৃষ্ট করে। এরপর আমরা পাখি বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা নেব। আমাদের উদ্দেশ্য পাখিকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে অন্যত্র ডাইভার্ট (সরানো) করা। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানান, শীতকালে পাখির আঘাতের ঝুঁকি বাড়ে। যদিও ঢাকা বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর জন্য বার্ড শুটার ব্যবহার করা হচ্ছে, কিন্তু তাতেও বিশেষ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমান টেকঅফের সময় ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে গেলে বিমানে বড় ক্ষতি হতে পারে। এতে ইঞ্জিন অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং বিমান নিয়ন্ত্রণ করতে পাইলটকে বেগ পেতে হয়। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের হেড অব সেফটি এএএম শামসুজ্জামান আমার দেশকে বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরে পাখির আঘাতের হার বিশ্বব্যাপী গড়ের তুলনায় অনেক বেশি। যেখানে বিশ্বের গড়প্রতি এক হাজার ফ্লাইটে ঝুঁকি ০.৫, সেখানে ঢাকায় এ হার ১.৭৩। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল হক

জানুয়ারি 31, 2025 - 11:56
 0  3
বার্ড হিটে বাড়ছে ঝুঁকি

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow