৪ দিন পরেও সুরাহা হয়নি সোহানা হত্যাকাণ্ডের,

আশরাফুজ্জামান বাবু, স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারন ইউনিয়নের বায়শা চাঁদপুর দাখিল মাদরাসার পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী সোহানা (১১) হত্যাকাণ্ডের ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনও কূলকিনারা হয়নি। ৭ জুন ঈদুল আজহার দিন বিকালে নিখোঁজ হওয়ার পর, পরদিন ভোরে তার লাশ পাওয়া যায় ফুফু বাড়ির পাশের একটি পুকুরে। ঘটনার পর থেকে তদন্তে নামে পুলিশ। ফুফু ফাতেমা, ফুফা ইলিয়াস, ফুফাতো ভাই নয়ন ও ফুফাতো বোন তন্বিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বের করতে পারেনি। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১০ জুন) থেকে তদন্তে পিবিআইও সম্পৃক্ত হয়েছে। পরিবারের আচরণে সন্দেহ প্রথম থেকেই পরিবারের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান এবং ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা, এলাকাবাসীর মনে সন্দেহ জাগিয়েছে। সবার প্রশ্ন, কীভাবে একজন শিশু পরিবারের ভিতরেই এমন নির্মম হত্যার শিকার হয়? সোহানার দাদা হাফেজ আব্দুর রহমান এলাকায় একজন স্বঘোষিত ‘গণক’। আয়না ভারন, তাবিজ-কবজ, ঝাড়ফুঁক দিয়ে মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেও, নিজের নাতনির খোঁজ বের করতে পারেননি তিনি। তার সহযোগী হিসেবে পরিচিত সোহানার ফুফা ইলিয়াস লাশ ‘আয়না ভারনের’ মাধ্যমে দেখেছেন বলে দাবি করেন। যদিও ঘটনার পর এলাকাবাসী মনে করেন—এই আয়না ভারনের আড়ালেই লাশ রাখা হয়েছিল, এটি একটি সাজানো নাটক। ঘরেই কী ঘটেছিল সব? সোহানার জামাকাপড় ও জুতা পাওয়া গেছে ফুফু ফাতেমার ঘরে। ফাতেমা জানান, সোহানা কখনও জুতা খুলে বাইরে যায় না। তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে, সোহানা আসলে ঘর থেকে বেরই হয়নি, তাকে ঘরের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে। আরও রহস্যময় বিষয় হচ্ছে, যেখানে লাশ পাওয়া গেছে, সেই পুকুরপাড় দিনের আলোতে ২-৩ বার খুঁজে দেখার পরও কিছু পাওয়া যায়নি। তাই অনুমান, রাতের আধারে সেখানে লাশ ফেলে রেখে ‘আয়না ভারন’ নাটক সাজানো হয়েছে। কাজ করছে অতীত ইতিহাসও প্রধান সন্দেহভাজন ফুফা ইলিয়াসের অতীত ইতিহাস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, সে তার শ্বশুর হাফেজ আব্দুর রহমানের সঙ্গে জড়িত হয়ে এলাকায় ‘কবিরাজি ব্যবসা’ চালিয়ে আসছিল। একইসাথে সে একাধিক বিয়েও করেছে, মাঝে মধ্যেই এলাকায় অনুপস্থিত থাকে। ঘটনার দিন বাড়িতে ছিল ফুফাতো ভাই নয়ন (১৭) ও বোন তন্বি (১৩)। নয়নের উপস্থিতি ও তন্বির অস্বাভাবিক দীর্ঘ ঘুম নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। মাদরাসা শিক্ষক কাঁদলেন সোহানার জন্য সোহানার শিক্ষক মনিরুজ্জামান জানান, সে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকেই ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিল। তার হাতের লেখা ছিল চমৎকার। অত্যন্ত মেধাবী এই শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। পুলিশ বলছে, তদন্ত চলমান ঝিকরগাছা থানার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আবু সাইদ জানান, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। সন্দেহভাজনদের ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই অনেক কিছু স্পষ্ট হবে বলেও জানান তিনি। শেষ কথা চারদিন পেরিয়ে গেলেও এক শিশুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের সুরাহা না হওয়া শুধু হতাশাজনক নয়, জনমনে প্রশ্ন ও ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত কত দ্রুত ফলপ্রসূ হয় এবং প্রকৃত হত্যাকারী আইনের আওতায় আসে কি না।

জুন 11, 2025 - 20:55
 0  26
৪ দিন পরেও সুরাহা হয়নি সোহানা হত্যাকাণ্ডের,

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow