৭৩ বছরের বাউল শিল্পীর জীবন সংগ্রাম: ভেনে মাটির জিনিস বিক্রি করেই চলছে সংসার।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি: জীবনের সায়াহ্নে এসে চরম বাস্তবতায় দিন পার করছেন পঞ্চগড়ের প্রবীণ বাউল শিল্পী দুদু মিয়া। এক সময়ের সুরের যাদুকর, যিনি মাটি ও মানুষের গান গেয়ে জয় করেছেন হাজারো হৃদয়, আজ জীবিকার তাগিদে ভেনে করে মাটির হাড়ি-পাতিল বিক্রি করছেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেওয়া এই গুণী শিল্পী বর্তমানে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১নং অমরখানা ইউনিয়নের মেহেনাভিটা গ্রামের একটি সরকারি খাস জমিতে ছোট্ট একটি ঘরে বাস করেন। বাপ-দাদার বাউল গানের ঐতিহ্য বুকে ধারণ করে আজীবন গান করেছেন তিনি। তার বাবা আইনুউদ্দীন ফকির ছিলেন একজন বিখ্যাত বাউল শিল্পী ও গীতিকার। সেই ধারাবাহিকতায় দুদু মিয়াও গেয়েছেন মানুষের আত্মার গান, সমাজের কথা, দুঃখ-ব্যথা আর জীবনের গভীর উপলব্ধি। স্কুল, কলেজ, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাইলেও জীবনের বিনিময়ে মেলেনি ন্যায্য প্রাপ্তি। এখন বয়স ৭৩। চোখে কম দেখেন, কানে কম শোনেন, শরীরের শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। গান গাওয়ার মতো সেই কণ্ঠস্বর আর নেই। জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত এই শিল্পী বলছেন, “আমি তো সারাজীবন গানই গাইলাম। কিন্তু তাতে তো সংসার চলে না। এখন দুই বেলা খাওয়ার চিন্তা করতে হয়। কোনো জমিজমা নাই, খাস জমিতে থাকি। একটা ঘর পেলেও শেষ জীবনটা একটু শান্তিতে কাটতো।” তার এই করুণ অবস্থায় এলাকার মানুষও দুঃখ প্রকাশ করছেন। ১নং অমরখানা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবু মায়েত সরকার মুকুট বলেন, “দুদু মিয়া একজন প্রকৃত সাংস্কৃতিক মানুষ। তার অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। সরকারের উচিত তার চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।” তিনি শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি পঞ্চগড়ের মাটি ও সংস্কৃতির জীবন্ত কিংবদন্তি। তার জীবন যেন অবহেলার অন্ধকারে হারিয়ে না যায়—এটাই এখন পঞ্চগড়বাসীর আশা। তিনি নিজেই আবেদন জানিয়েছেন: “আমি করুণা চাই না, চাই আমার প্রাপ্য। সারাজীবন যে সমাজের জন্য গান করলাম, সেই সমাজ কি আমাকে শেষ বয়সে একটু সম্মান, একটু নিরাপত্তা দিতে পারবে না?”

আপনার অনুভূতি কী?






