এপিএস সাঈদুরের সখ্যতায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন পরিচালক ডা. শাহীন

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহীনের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠে আসছে। খুলনা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিনের এপিএস সাইদুর রহমানের সখ্যতায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। তবে উত্থাপিত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিচালক। এদিকে পরিচালকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে হাতপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্সরা। অপরদিকে পরিচালকের ঘনিষ্ঠজনেরা সংবাদকর্মীদের পক্ষে আনতে নানান তৎপরতা চালাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে যোগদান করেন পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহীন। এরপর থেকে হাসপাতালে তার দপ্তরে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু খুলনার শহীদ সিটি কলেজের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম। শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বাল্য বন্ধু, এমন তথ্য হাসপাতাল অঙ্গনে বেশ জোরেশোরে বাজতে থাকে। মূলত: তখন থেকেই জনপ্রশাসন মন্ত্রীর ছায়া শক্তি শিক্ষক সিরাজ, হাসপাতাল অঙ্গনে এমন প্রভাব ফেলতে সক্ষম হন পরিচালক। তখন থেকেই শুরু হয় তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কর্মকাণ্ড, হাসপাতালের ঠিকাদার অন্তর্ভুক্তি, মালামাল সরবরাহের ঠিকাদার নিয়োগ, আউটসোসিং ঠিকাদার নিয়োগ, সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, হাসপাতালের সরকারি গাড়ী (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-২৬০২) ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন পরিচালক শাহীন। অফিস নির্ধারিত সময়ের পর সরকারি কোন কাজ না থাকলেও তিনি তার বন্ধু শিক্ষক সিরাজ ও অন্যান্যদের নিয়ে প্রায় বিভিন্ন স্থানে প্রাত:ভ্রমণে বের হন। এছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার সরকারি গাড়ীতে করে তিনি তার যশোরের বাসভবনে যান, অনুুরুপ শনিবার সকালে একই গাড়ীতে তিনি কর্মস্থলে ফেরেন। মাঝেমধ্যে সরকারি গাড়ী যশোরে থেকে যায়। পরিবারের লোকজন সাথে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি শেষে ওই গাড়ীতে করে একবারে শনিবারে কর্মস্থলে ফেরেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।জানা গেছে, সরকারি গাড়ীর এমন অপব্যবহার রোধে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পরিচালকের বিরুদ্ধে। এছাড়া ঠিকাদার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের কারণে কতিপয় ঠিকাদাররাও ক্ষুব্ধ হন তার বিরুদ্ধে। এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে শিক্ষক সিরাজের মাধ্যমে খুলনার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং শেখ পরিবারের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন পরিচালক। আর একাজে সহয়তা করেন শিক্ষক সিরাজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য’র এপিএস সাঈদুর রহমান। এরপর থেকেই পরিচালকের ব্যবহৃত সরকারি গাড়ীতে নিয়মিত চড়তেন সাঈদুর ও সিরাজ। শুধু তাই নয়, এপিএস সাঈদুর খুলনায় এলেই নিয়মিত ব্যবহার করতেন পরিচালকের গাড়ী, দিনের পর দিন গাড়ীটি তার কাছেই থাকতো। আর এভাবেই এপিএস সাঈদুরের মাধ্যমে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন ডা: শাহীন। ফলশ্রুতিতে হাসপাতালের কেউই পরিচালকের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন না। আরও জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) রুম থেকে ৭/৮ লাখ টাকা মূল্যের টেলিস্কোপ মেশিন চুরি হলেও অজ্ঞাত কারণে এনিয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি পরিচালক শাহীন। এছাড়া হাসপাতালের নিজের ব্যবহার করা গাড়ীসহ অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নেন তিনি। সূত্র আরও জানিয়েছে, খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামানকে জোরপূর্বক পদত্যাগের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন পরিচালক ডাঃ শেখ আবু শাহীন, এমন সংবাদ প্রকাশের পর পরিচালক শাহীন ও তার দোসর শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম তোড়জোড় শুরু করে। সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে নানান তৎপরতা চালায় তারা। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানাতে একটি বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে সেটি ১০/১২টি সংবাদপত্র অফিসে পৌছে দেন শিক্ষক সিরাজ। পূর্বের ন্যয় এবারও একাজে হাসপাতালের সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন সিরাজ ও পরিচালকের ভাই ব্যাংকার শামীম। হাসপাতালের স্টাফ না হয়ে সরকারি গাড়ী ব্যবহার করা এবং পরিচালকের অপকর্ম ঢাকতে শামীম ও সিরাজের এমন তোড়জোড়ে ক্ষুব্দ কর্মকর্তা, নার্স ও স্টাফরা। পরিচালক ডা: আবু শাহীন বলেন, হাতপাতালের সরকারি গাড়ি নিজে কিংবা অন্য কাউকে কখনও ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি। এছাড়া শিক্ষক সিরাজ বন্ধু মানুষ, বিপদে-আপদে বন্ধুরা এগিয়ে আসবে এটা স্বাভাবিক। আর গাড়ী মেরামতের নামে টাকা উত্তোলনের তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। টেলিস্টোপ মেশিন চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

Sep 15, 2024 - 19:54
 0  9
এপিএস সাঈদুরের সখ্যতায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন পরিচালক ডা. শাহীন

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow