কৃষি ব্যাংকে পদোন্নতি বৈষম্যের শিকার ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তারা আন্দোলনে নামছে
দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি বৈষম্য চলছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে ৯ম গ্রেড থেকে ওপরে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতি হলেও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা। অথচ কৃষি ব্যাংকের মোট জনবলের অর্ধেকের বেশি দশম গ্রেডের কর্মকর্তা। অন্য গ্রেডের কর্মকর্তাদের বিধান অনুযায়ি ৩ বছর পরপর পদোন্নতি হলেও দশম গ্রেডের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৭ থেকে ৮ বছর। অনেক ক্ষেত্রে এই সময়ের মধ্যেও অনেকের পদোন্নতি মেলে না। দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত থাকায় অসন্তোষ জন্ম নিয়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। বারবার দাবি জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পদোন্নতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দশম গ্রেডের কর্মকর্তার। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তাদের (১০ গ্রেড) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কৃষি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ৩ বছরের মাথায় মুখ্য কর্মকর্তা হচ্ছেন। একইভাবে মুখ্য কর্মকর্তা থেকে ঊর্ধ্বতন মুখ্য কর্মকর্তা থেকে সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক প্রতি ধাপেই ৩ বছরে পদোন্নতি পাচ্ছেন। অথচ ২০০৮ সালের প্রবিধানমালায় ১০ গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য একই কথা লেখা থাকলেও ভয়াবহ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। ৩ বছর তো দূরের কথা দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা ৭-৮ বছরেও পদোন্নতি পাচ্ছে না।বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তাদের দাবি, কৃষি ব্যাংকের মোট ১০ হাজার ২৭ জন জনবলের মধ্যে ৫ হাজার ২৭২ জন শুধু দশম গ্রেডের কর্মকর্তা। এই সিংহভাগ জনবলই ব্যাংকের প্রাণ। ঋণ আদায়, বিতরণ, আমানত সংগ্রহ, কিংবা প্রাত্যহিক গ্রাহক সেবা এসবের চৌদ্দ আনা কাজই এই গ্রেডের কর্মকর্তারা করে থাকেন। নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার মধ্যেও তাই প্রতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত সকল লক্ষ্যমাত্রা সন্তোষজনকভাবে অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। অথচ এই গ্রেডের জনবলই সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার।বৈষম্যের শিকার দশম গ্রেডের এক কর্মকর্তারা কালবেলাকে বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও বারবার আশ্বাস দিয়ে উল্টো কর্মকর্তাদের অসন্তোষ মনে আরও ক্রোধ জন্ম দিচ্ছে। ২৭ আগস্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে স্মারকলিপি দিয়ে দাবির কথা জানিয়ে ৭ কর্মদিবস সময় দেওয়া হলেও অদ্যবধি কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই কর্মকর্তারা মনে করছেন বৈষম্যমূলক এই স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাবেন।এদিকে, কর্মকর্তাদের অসন্তোষ অনেক আগে থেকেই জন্ম নিয়েছে। পদোন্নতিতে নানা অনিয়মের কথা জানান কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ব্যাংকটির অথরিটিতে আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছু মদদপুষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন। অন্য সকল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক যেখানে পঞ্চম গ্রেড থেকে চতুর্থ গ্রেডে পদোন্নতিতে ভাইভা দিতে হয়, সেখানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ভাইভা শুরু করে দশম গ্রেড থেকে। এ ভাইভাতে কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তাদের থেকে ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে প্রতিবছর কোটি টাকার লোপাট করে, আর কর্তৃপক্ষের কিছু কর্মকর্তা দূর্নীতি করে জ্যেষ্ঠতা তালিকা অমান্য করেও পদোন্নতি দেওয়ার উদাহরণ তৈরি করেছে। পদোন্নতিতে অনিয়মের অভিযোগ করে কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকটির অসাধু সেচ্ছাচারী নিয়ম নিয়ে কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে গেলেই কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রকার শাস্তির ভয় দেখায় এবং রিমোট অঞ্চলে পোস্টিং দিয়ে দেয়। কর্তৃপক্ষের এরকম স্বৈরাচারী আচরণ গত ২৭ আগস্টের তারিখের সার্কুলার জারিতেই প্রতীয়মান। তারা জানান, গত ২৭ আগস্ট প্রধান কার্যালয়ে সকল কর্মকর্তাদের কর্মসূচি ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সকল কর্মকর্তারা তাদের একদিনের বেতন সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন। এরপরও কর্মসূচির কথা জানতে পেরে ফ্যাসিস্ট কর্তৃপক্ষ বিধি বহির্ভূত একটি সার্কুলার জারি করে, সেখানে বলা হয় সরকারি বন্ধের দিনেও কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করে বাড়ি যেতে পারবে না।
আপনার অনুভূতি কী?