ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ, দিশেহারা কৃষক
মোঃ রাশিদুল ইসলাম,মাগুরাঃ কারেন্ট পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার আমন ধান চাষিরা।বিভিন্ন ধরনের ঔষুধ প্রয়োগ করেও প্রতিরোধ পাওয়া যাচ্ছে না। মাগুরার শ্রীপুরে চলতি মৌসুমে আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে । যার ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে। একদিকে তেল, সার, কীটনাশক ও উৎপাদনের মজুরি বৃদ্ধির ফলে এমনিতেই বেকায়দায় রয়েছেন কৃষকরা। উপজেলায় উৎপাদনের মজুরি খরচ, সার, কীটনাশকের বাড়তি দামেই নাভিশ্বাস। এর মধ্যেই আবার আমন ধানে নতুন করে কারেন্ট পোকার আক্রমণ। যার ফলে কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এই পোকার আক্রমণের কারণে প্রথমে ধান গাছপুরো শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি মৌসুমে শ্রীপুরে আমন ধান চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৪শ ৭৫ হেক্টর জমিতে। শ্রীপুর উপজেলার বিলনাথুর গ্রামের কৃষক মালেক মন্ডল জানান,আমি ৪ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছি।তার মধ্যে ১ বিঘা জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধান ক্ষেত সব শেষ হয়ে গেছে। এখন খরচ উঠানোই কষ্টকর।বিভিন্ন ঔষুধ প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। বদনপুর গ্রামের নুরুল বিশ্বাস জানান, ৩ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি।অনেক টাকা খরচ হয়েছে অনাবৃষ্টির কারণে ধানে কারেন্ট প্রকার আক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ ক্ষতির সম্মুখীন। এলাকার শত শত কৃষক আজ পথে বসে চলেছে কারেন্ট পোকার আক্রমণে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার আমলসার ইউনিয়নে আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণে এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা জানান, আর কিছুদিনের মধ্যেই ধানের শিষ বের হবে। এমন অবস্থায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকা দমনে একাধিকবার কীটনাশক প্রয়োগ করেও তেমন ফল মিলছে না। প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুইবার কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। আক্রান্ত ধান গাছের গোড়ায় খুব ছোট আকৃতির এই পোকা দেখা যায়। দ্রুত ধানের ক্ষতি করে কারেন্ট পোকা। সদর উপজেলার হোগলডাঙ্গা এলাকার কৃষক মনছুর জোয়াদ্দার বলেন, এবার তিনি ২ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ কারেন্ট পোকা দেখা দিয়েছে। দুইবার বিষ ও পাইরাজিন স্প্রে করেছেন। কিন্তু সেভাবে ফল মিলছে না বলে জানান তিনি। আমলসার এলাকার আমনচাষি সোহেল রানা বলেন, এবার প্রথম থেকে ধানের অবস্থা ভালো ছিল। ধানের শিষ বের হতে শুরু করেছে। আশা ছিল খুব ভালো ফলন হবে। কিন্তু কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ায় ফলন কমার আশঙ্কা করছেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ধানের চারা রোপণের আগেই কিছু ব্যবস্থা নিলে কারেন্ট পোকার আক্রমণ রোধ করা সম্ভব। এর মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রোপণ, আইলের মাঝে বিলি কেটে দেওয়া, ইউরিয়া সারের যথাযথ প্রয়োগ, আগাম ও প্রতিরোধে সক্ষম জাতের চারা রোপণের মতো ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সালমা জাহান নিপা বলেন, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। মাঠে এবার ধানখেত দেখে কৃষকের পাশাপাশি তাঁরাও খুব খুশি ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কারেন্ট পোকার আক্রমণে কৃষকদের পাশাপাশি তাঁরাও চিন্তিত। পোকা দমনে ‘পাইরাজিন' কীটনাশক দিয়ে ধান গাছের গোড়া ও ওপরে স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সালমা জাহান নিপা আরও জানান, পোকা দমন করতে হলে ধান গাছ সারিবদ্ধভাবে রোপন করতে হবে। আক্রান্ত খেতে যদি পানি থাকে বের করে দিতে হবে। সূর্যের আলো ও বাতাস যাতে ধানগাছের গোড়ায় পৌঁছাতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
আপনার অনুভূতি কী?