পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে তোলা ছবি দেখিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি জমি দখল, মারধরের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।।যশোরে জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে তোলা ছবি দেখিয়ে সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের মালিডাঙ্গা গ্রামে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে বহুল আলোচিত যুবলীগ ক্যাডার আরজু মল্লিক বিপুল ও তার পিতা আলোচিত ভূমিদস্যু শম্ভু নাথ মল্লিকের বিরুদ্ধে। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথসহ একাধিক আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে তোলা ছবি দেখিয়ে বিগত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনামলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব ও জমি দখল চাদবাজিসহ নানা অপকর্ম করতো বলে জানায় একাধিক ভুক্তভোগী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকেই বেপরোয়া আরজু মল্লিক বিপুল ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও আবারও মালিডাঙ্গা এলাকায় সশস্ত্র মহড়া ও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছেন। সবশেষে গত ১১ জানুয়ারি আরজু মল্লিক বিপুল ও তার সহযোগীদের মালিডাঙ্গা গ্রামের মৃত নাইমুর রহমান হিমেলের ১ একর ১৭ শতক জায়গা দখল করতে গেলে স্থানীয়রা ধাওয়া দেয়। এ সংক্রান্ত সদর কোতয়ালী মডেল থানায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে অভিযোগ ও দেওয়া হলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। বিপুল ও তার সহযোগীরা বহালতবিয়ত থাকায় আতংকে ভুক্তভোগীরা। আলোচিত পিতা-পুত্রের রামরাজত্ব কায়েম করার এত অভিযোগ থাকলেও পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় শংকার মধ্যে রয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সরেজমিনে খোজ নিতে মালিডাঙ্গা গ্রামে গেলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে জানা যায়, বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সময় এলাকায় মুর্তমান আতংকের নাম ছিলো শম্ভু নাথ মল্লিক ও তার ছেলে যুবলীগ ক্যাডার আরজু মল্লিক বিপুল বাপ ছেলের অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলো। এই মহা ধান্ধাবাজ ভূমিদস্যু পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে গেছিলো এলাকার সাধারন মানুষ। বিপুল মুলত পতিত স্বৈরাচার হাসিনার দোসর সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মোহিত কুমার নাথের অনুসারী হয়ে এলাকায় সন্ত্রাস চাঁদাবাজি সহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো এক্ষেত্রে জেলা পুলিশের সাবেক এসপি প্রলয় কুমার জোয়ার্দার এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা নিতেন বলে জানান একাধিক গ্রামবাসী। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পিকুল ও জেলা পুলিশের একাধিক উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে তোলা ছবি দেখিয়ে এলাকায় নানা অপকর্ম, ত্রাস সৃষ্টি জমি দখল চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপকর্ম করতো বলে জানায় একাধিক ভুক্তভোগী। আরো খোজ নিতে মালিডাঙ্গা গ্রামে গেলে জানা যায় ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী কাজী নাঈমুর রহমান হিমেলের এক একর ১৭ শতক জায়গা দখল করতে গেলে হিমেল বাধা দেয় এতে বিপুল ও তার সহযোগীরা কাজী নাঈমুর রহমান হিমেল কে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে আরজু মল্লিক বিপুল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় হিমেলের সহধর্মিনী তামান্না রহমান ২২ ফেব্রুয়ারী যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এবিষয়ে তামান্না রহমান জানান, মালিডাঙ্গা গ্রামে ‘মাটিয়াল এগ্রো’ নামে তাদের একটি কৃষি ফার্ম রয়েছে। ফার্মটি ৫ একর ০৭ শতক জমির উপর নির্মিত। সেখান থেকে ১ একর ১৭ শতক জমি অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নেয় আরজু মল্লিক বিপুল ও তার পিতা শম্ভু নাথ মল্লিক। এরপর জমি উদ্ধারের জন্য আদালতে মামলা করে ভুক্তভোগী পরিবার। তামান্না রহমানের কাছে জমির বৈধ দলিল থাকায় আদালত জমির প্রকৃত মালিককে জমি ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অবৈধভাবে জমির ভোগদখল করতে থাকেন আরজু মল্লিক বিপুল ও তার পিতা শম্ভু নাথ মল্লিক। এই বিষয়ের প্রতিবাদ করতে গেলেই গত ২১ ফেব্রুয়ারী পিটিয়ে হত্যা করা হয় তামান্না রহমানের স্বামী নাঈমুর রহমান হিমেলকে। তামান্না রহমান অভিযোগ করে বলেন, স্বামীকে হত্যার পর তাকেও হত্যার হুমকি দেয় বিপুল। কিন্তু কোতোয়ালি মডেল থানায় তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে তৎকালিন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দারের চাপে থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন। তামান্না রহমান বলেন, স্বামীকে হারিয়ে আমি সন্তানদের নিয়ে ভিতিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছি। ভেবেছিলাম পরিবর্তীত পেক্ষাপটে আমি ন্যায় বিচার পাবো। কিন্তু এখনো বিপুল-শম্ভুরা প্রকাশ্যে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কিছুদিন আগেও আমাদের খামারে এসে কর্মচারীদের মারধর করেছে। এখন আমরা জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় আছি। আরজু মল্লিক বিপুল ও তার পিতা শম্ভু মল্লিকের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ করেছেন হাটবিলা জামতলা এলাকার শেখ কামাল হোসেন। তিনি বলেন, বিপুলের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় মামলা আছে। কিন্তু পুলিশ কখনো তাদের গ্রেফতার করেনি। কারণ যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার ও জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সময় তাদের সাথে তোলা ছবি ব্যবহার করেই সে এত অপকর্ম চালিয়েছেও বলে অভিযোগ করেন তিনি। মালিডাঙ্গা গ্রামের ঘের কর্মচারি আমির আলী জানান, বিপুলের অত্যাচারে আমরা ঘেরে মাছ চাষ করতে পারিনি। নিয়মিত চাঁদা দিতে হতো। মুলত সে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা ও কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তোলা ছবি দেখিয়ে বলতো তাকে চাঁদা না দিলে ঘেরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলবো। আমার কিছু করতে পারবি না। আমি এসব নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে চলাফেরা করি। পুলিশের ছবি ব্যবহার করে অপকর্মের অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরাম জানিয়েছেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ অবগত হয়েছে। যে ছবির কথা বলা হচ্ছে সেটি মূলত একটি দুর্গা পূজার ছবি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কেউ পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আপনার অনুভূতি কী?