প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরোণ ২ দুই মাসের জন্য বন্ধ।
মোঃ আব্দুর রহিম,শ্যামনগর সাতক্ষীরা থেকে।। প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে বুধবার থেকে দুই মাসব্যাপি সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ১লা জানুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনের পশ্চিম ও পূর্ব এই দুই বিভাগে এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। বনবিভাগ পাস বা অনুমতি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে স্থানীয় জেলে আব্দুর রহমান বলেন, বন বিভাগ কাগজ কলমে সুন্দরবনের প্রবেশ অধিকার বন্ধ রাখেন কিন্তু গোন চুক্তিতে বিশেষ কিছু জেলেদের সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় পাঠিয়ে কাঁকড়া ধরার ধরা হয় এমন অভিযোগ তার। উপজেলার কলবাড়ি এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাঁকড়া ব্যবসায়ী বলেন, নামমাত্র বন্ধ থাকলেও প্রতিনিয়ত সুন্দরবন থেকে কাকড়া এসে থাকে এ দু মাসে, বন বিভাগের সাথে সু-সম্পর্ক রেখে কিছু জেলেরা সুন্দরবন থেকে গোপনে কাঁকড়া ধরে লোকালয় নিয়ে আসে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমার দীর্ঘদিনের, এবারও তার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তার। বন বিভাগের সুত্রে জানা যায়,সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৪ দশমিক এক বর্গকিলোমিটার,যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ,২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ।বুড়িগোয়ালিনী এলাকার কাঁকড়া ধরার জেলেরা জানান, আমার গত সোমবার বিকেলে কাঁকড়া ধরার কয়েকটি নৌকা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরে এসেছে। আর্থিকভাবে সচ্ছল কোনো লোক সুন্দরবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া ধরতে যান না। যারা যায় তারা প্রায় সবাই দরিদ্র। দুই মাস নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের পরিবারগুলোর চলতে কষ্ট হয়। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন (বিশেষ শর্তে ঋণ) নিয়ে চলতে হয়। জেলেরা নিষেধাজ্ঞার এই দুই মাস সরকারি সহায়তার দাবি জানান।হরিনগর বাজারের কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা বলেন , শ্যামনগর থেকে গড়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ লাখ টাকার কাঁকড়া ঢাকায় পাঠানো হয়। আর বিদেশে রপ্তানি করা কাঁকড়ার অনেকটাই সুন্দরবন থেকে ধরা হয় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, এ দুই মাসে রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে এর সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ এ সময় বেকার হয়ে পড়েন। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়,ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন দুই হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র আছে। এর মধ্যে কাঁকড়া ধরার নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র আছে এক হাজার ৬০০টি। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন,শ্যামনগরে নিবন্ধিত জেলে আছেন প্রায় ২৮ হাজার। যার অর্ধেকেরও বেশি কাঁকড়া ধরার জেলে। বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) জিয়াউর রহমান জানান, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কাঁকড়া ডিম পাড়ে। এ ছাড়া কাঁকড়ার যখন ডিম হয়, তখন এদের ধরা খুবই সহজ। এরা ক্ষুধার্ত থাকে। এদের সামনে যে খাবার দেওয়া হয়, তা খাওয়ার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসে। যদি এ সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয়, তাহলে পরের বছর বেশি কাঁকড়া উৎপাদন সম্ভব। অবৈধ কাঁকড়া শিকার বন্ধে সুন্দরবনে বনবিভাগ ও কোষ্টগার্ড এর টহল জোরদার করা হয়েছে।
আপনার অনুভূতি কী?