মাতাল বিএসএফ সাইদুলকে গুলি করে: উদ্ধারকারী হানিফ

সুনামগঞ্জের প্রতিনিধি।।। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার গামারিতলা গ্রামের যুবক সাইদুল ইসলামকে বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১২০৯/৩ এস এর পাশে পাহাড়ি ছড়ায় গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১২০৯/৩ এস এর পাশে পাহাড়ি ছড়ায় যুবক সাইদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। ঘটনার পর বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সাইদুল বাংলাদেশ থেকে ভারতে সুপারি পাচার করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে মারা যান। নিহত সাইফুলের পরিবার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, হারিয়ে যাওয়া গরু খুঁজতে সে ছড়ার পাড়ে গিয়েছিল। পরে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন ছিল চিনাকান্দির বাজারের সাপ্তাহিক হাট। গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষ হাটে চলে যান সংসারের বাজার করতে। সে সময় গ্রামে মহিলা আর শিশু কিশোর ছাড়া কেউ বাড়িতে ছিলেন না। জিরো পয়েন্টের ক্ষেতখামারে কোন মানুষ ছিল না। হঠাৎ করে গ্রামবাসী একসঙ্গে দুটি ফায়ারের শব্দ আসে জিরো পয়েন্টের ছড়া এলাকা থেকে। সে সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রধারী বিএসএফের গুলিতে মারাত্মক আহত সাইদুলকে রক্ষার জন্য এগিয়ে যান সাইদুলের আত্মীয় হানিফ মিয়া। গ্রাম সম্পর্কে হানিফ সাইদুলের ভাই হন। হানিফের পেছনে ছুটে যান গামারিতলা গ্রামের শিশু কিশোর ও মহিলারা। গ্রামবাসীকে আসতে দেখে বিএসএফ সদস্য একটি ফাঁকা গুলি করে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হানিফ জানান, ৮ জানুয়ারি বিএসএফের তিনজন সদস্য সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ভাঙা অংশ দিয়ে গামারিতলা গ্রামের পাহাড়ি ছড়ায় একটি স্থানে একজন ও অন্যস্থানে দুজন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য অবস্থান করে। সাইদুল যখন নিখোঁজ গরুর খোঁজ নিতে ছড়া এলাকায় যায় তখন এক মাতাল সীমান্তরক্ষীর মুখোমুখি হয়। সাইদুল বিএসএফকে জানায় হারিয়ে যাওয়া গরুর খোঁজে সে ছড়ায় এসেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। একপর্যায়ে ছড়ার নিচে থাকা মাতাল বিএসএফ ছড়ার ওপরে তীরে থাকা সাইদুলকে পরপর দুটি গুলি করে মারাত্মক আহত করে। গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে সাইদুলকে উদ্ধার করতে ছড়ার পাড়ে যান হানিফ। গিয়ে দেখেন গুলিবিদ্ধ সাইদুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে বুলেটের আঘাতে সাইদুলের বুক ও কোমর থেকে রক্ত মাটি গড়িয়ে ছড়ার পানিতে পড়ছে। রক্তাক্ত সাইদুল তার কাছে পানি খেতে চায়। বেশ কয়েকবার পানি খাওয়ার কথা বলে। পরে তার জবান বন্ধ হয়ে যায়। অজ্ঞান সাইদুলকে মৃত ভেবে মাতাল বিএসএফ তার দুই হাত ধরে টেনেহিঁচড়ে ভারতে নেয়ার চেষ্টা করে। এদিকে সাইদুলের দুই পা ধরে টেনে রাখে হানিফ। টানাহেঁচড়ার এক পর্যায়ে ছড়ায় লুকিয়ে থাকা আরও দুজন বিএসএফ আসে অজ্ঞান সাইদুলকে ভারতে নিয়ে যেতে। তাদের সঙ্গে জোরাজোরি করে ছড়ার পাড় থেকে ক্ষেতের আইল দিয়ে টেনেহিঁচড়ে সাইদুলকে গামারিতলা গ্রামের কাছে নিয়ে আসেন তিনি। তখনও সাইদুলের শরীর থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল। পরে গ্রামবাসী এগিয়ে এসে দ্রুত তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  বৃহম্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরের দিনের বেলায় উচ্চশক্তির ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে সীমান্ত এলাকার নজরদারি করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভক্তকারী সীমারেখা র‌্যাডক্লিফ লাইনে সারিসারি লোহার খুঁটিতে কুড়ি স্তরে লাগানো আছে ধারালো কাঁটাতার। প্রায় আট থেকে দশফুট উচুঁ এই বেড়ার পাশে রয়েছে বিএসএফের আলাদা টহল সড়ক। কাঁটাতারের বেড়ার শত গজের মধ্যে সড়কের পাশে রয়েছে বিএসএফের নজরদারি পোস্ট। আধুনিক অস্ত্র নিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পাহাড়া দিচ্ছে বিএসএফ জওয়ান। নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভাল করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা গাড়িতে চড়ে সার্বক্ষণিক টহল কার্যক্রম ও সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজদারি করে।

জানুয়ারি 10, 2025 - 12:35
 0  2
মাতাল বিএসএফ সাইদুলকে গুলি করে: উদ্ধারকারী হানিফ

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow