যশোরে ক্লিনিকের মালিক-ডাক্তারসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা,তদন্তভার পেল সিআইডি
যশোর প্রতিনিধি: যশোরে বহুল আলোচিত দেশক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল ও ডাক্তার-মালিকসহ ঘটনায় ৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা হয়েছে। বিচারক ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য যশোর সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহত প্রসূতি তাজরিন সুলতানার চাচা আবদুল আলিম। এ বিষয়ে ক্লিনিক মালিক রাজু আহমেদ বলেন-বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ তদন্ত করছে। মামলা হলেই অপরাধী প্রমাণিত হয় না। এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে আবদুল আলিমের অভিযোগ, গত ১৬ মে প্রসূতি তাজরিন সুলতানা রুকুকে দেশ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৭ মে ভোরে চিকিৎসক সন্দীপ কুমার পাল ওরফে এসকে পাল সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমের তাজরিনের কন্যা সন্তান জন্ম হয়। ১৮ মে সকাল থেকে প্রসূতি অস্বাভাবিক পেট ফোলা শুরু হয়। বিকেলে ডা. শাহীন কবির এসে রোগী দেখে নার্সদের বলেন, ‘রোগীর পেটে গ্যাস হচ্ছে। সব ওষুধ পাল্টে দাও।’ নতুন ওষুধ খাওয়ার রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। রাতে ডা. সন্দীপ পালকে রোগীর অবস্থা জানানো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসক সন্দীপ পাল এসে বলেন, ‘‘রোগী ভালো আছে, টেনশনের কারণ নেই।’’ পরে আবার রোগীর অবস্থা জানাতে গেলে চিকিৎসক সন্দীপ পাল ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর স্বজনদের মারতে আসেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘রোগীর ডায়রিয়ার লক্ষণ।’’ ওই অবস্থায় ১৯ মে দেশ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজু আহমেদ ক্লিনিকে এলে আমরা তাকে রোগীর কাছে নিয়ে যাই। তিনি এসে বলেন, ‘‘এই কলেরার স্যালাইন কে দিয়েছেন? বলেই তিনি নিজেই টেনে স্যালাইন খুলে ফেলেন। তখন আমরা বলি, ডা. স্যার দিয়েছেন। এই ওষুধ খাওয়ানোর পর রোগী আর কথা বলতে পারছে না। রাজু আহমেদ আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন।’ একপর্যায়ে তড়িঘড়ি করে রোগী রেফার্ড করে দেয় দেশ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ২০ মে ভোরে খুলনা সিটি মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগী মারা যায়। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ২৯ মে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘দেশ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজু আহমেদ, ডাক্তার সন্দীপ পালসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি সদর আদালতে মামলা করেছি। মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। মামলা তুলে নিতে বিবাদী পক্ষের লোকজন নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অভিযুক্ত ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’ দেশ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (মালিক) রাজু আহমেদ বলেন, ‘মারা যাওয়া রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করলেই তো আমরা অপরাধী না। রোগীর রিপোর্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। এখানে যদি চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি থাকে; সেটা স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্তে উঠে আসবে। তারা যেহেতু তদন্ত রির্পোট দেয়নি; তাহলে আমাদের ঢালাও ভাবে অভিযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই অসুস্থ; আমি কাউকে হুমকি দিব কীভাবে? শুনেছি আদালতে ভুক্তভোগীরা মামলা করেছে; আদালতই বিচার করবে।’ এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন-‘রোগীর যিনি সিজার করেছেন; সেই ডাক্তার সার্জারির ওপরে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী না। আবার অপারেশনের পর রোগীর অবস্থা যখন অবনতি হয়; তখন ডাক্তার তার চিকিৎসার অবহেলা করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার অনুভূতি কী?