রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি পর্যালোচনা করছে রেলওয়ে।
সুজিত সাহা চট্টগ্রাম ব্যুরো স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার জনপ্রিয় মাধ্যম আন্তঃনগর ট্রেন। গত দেড় দশকে আন্তঃনগরের অনিয়ন্ত্রিত যাত্রাবিরতি ট্রেনগুলোর সেবার মান নামিয়ে এনেছে দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনের পর্যায়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭ বছরে রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া যাত্রাবিরতিগুলো প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে। এতে রেলের যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি ছাড়াও রাজস্ব আয় বাড়বে বলে আশা করছে রেলওয়ে। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ বছরে দেশের বিভিন্ন স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির হার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এই সময়ে শুধু পূর্বাঞ্চলেই ২৩টি আন্তঃনগর ট্রেনকে ২৩টি স্টেশনে উভয় মুখে (৪৬ বার) যাত্রাবিরতি দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রী, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত যাত্রাবিরতির জন্য রেলওয়েকে সুপারিশ করেছেন। রেলের মাঠ পর্যায়ের অপারেশন ও বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে অনীহা থাকলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করেছে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালীন সংকটের পর সারা দেশে ৯৩টি দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনের সার্ভিস বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। মূলত দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্টেশনে ট্রেন থাকার হারও কমে যায়। পরে স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেলের অনাগ্রহ সত্ত্বেও যাত্রাবিরতি বাড়াতে হয়েছে রেলওয়েকে। ১৯৮৫ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী মহানগর এক্সপ্রেসের মাধ্যমে আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু হয়। ট্রেনগুলোয় বিরতির সংখ্যা যথাসম্ভব সীমিত এবং গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বা জংশন ছাড়া কোথাও না থামার সিদ্ধান্ত রাখা হয়। সম্প্রতি জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধে বিভিন্ন স্টেশনে দেয়া আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির তালিকা চাওয়া হয় পরিবহন বিভাগের কাছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯-২৩ সাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলে ১৫ বছরের ২৩ জোড়া ট্রেনের যাত্রাবিরতির তালিকা পাঠানো হয় রেলভবনের কাছে। তালিকায় সাবেক রেলপথ মন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধে রেলভবন থেকে নতুন করে যাত্রাবিরতি কার্যকর করতে রেলভবনের চিঠির সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, 'রেলওয়ে সেবার মান বাড়ানোর দিকে বাড়তি নজর দিচ্ছে। নিয়মিত প্রোগ্রামের পাশাপাশি ট্রাফিকের কর্মকর্তারা ট্রেন ভ্রমণে সরেজমিনে সমস্যা সমাধানসহ যাত্রীদের মতামত নিচ্ছেন। পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত যাত্রাবিরতিগুলো নিয়েও ভাবছে রেলওয়ে।' রেল কর্মকর্তারা বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অফিস ওয়ার্কের পাশাপাশি নিয়মিত বিরতিতে রানিং ট্রেনের সেবার মান যাচাই, পরিদর্শন ও সেবা গ্রহীতার মনোভাব পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে গুরুত্ব বিবেচনায় এনে এসব অন্যকাঙ্ক্ষিত যাত্রাবিরতির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে রেলওয়ে। নাম প্রকাশ না করে রেলের পরিবহন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রায় ১০০টি দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেন বন্ধ থাকায় এখনই আন্তঃনগর ট্রেনের অপ্রয়োজনীয় যাত্রাবিরতি তুলে নেয়া হলে স্থানীয়দের ক্ষোভ বাড়বে। এজন্য রেলওয়ে প্রাথমিকভাবে বন্ধ থাকা দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। পরিবহনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি আন্তঃনগর ট্রেনে দূরত্ব হিসাবে ৫-১০টি কিংবা তারও বেশি যাত্রাবিরতি দেয়া থাকে। কিন্তু ন্যূনতম ২ মিনিট যাত্রাবিরতির জন্য প্রতিটি ট্রেনের অন্তত ১০ মিনিট সময়ক্ষেপণ হয়। রেলের জনবল কমে যাওয়ায় বাড়তি যাত্রাবিরতির কারণে সংকটগুলো প্রকট হচ্ছে। রেলওয়ের বেশির ভাগ ট্রেনেই কানেক্টিং ইঞ্জিন ও রেকের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করা হয়। ফলে নতুন নতুন যাত্রাবিরতির কারণে ট্রেনগুলোর রানিং টাইম বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য ট্রেনের যাত্রার সময় ও গন্তব্যে পৌঁছতেও বিলম্ব হচ্ছে। এজন্য কিছু ট্রেনের অনাকাঙ্ক্ষিত যাত্রাবিরতি তুলে দিয়ে সেবার মান বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
আপনার অনুভূতি কী?