রাসুল (সা.) শ্রমিকের অধিকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন : ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাসুল (সা.) শ্রমিকের অধিকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাদের হকের ব্যাপারে বারবার সতর্ক করেছেন। শ্রমিকের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার জন্য উৎসাহিত করেছেন। শনিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর পল্টনের ফেনী সমিতি অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের অধিবেশন ও জেলা-মহানগরী সভাপতি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আ ন ম শামসুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, গোলাম রব্বানী, লস্কর মো. তসলিম, কবির আহমদ, মাস্টার শফিকুল আলম ও মনসুর রহমান প্রমুখ। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘন না করতে এবং তাদের সঙ্গে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ সচেষ্ট ছিলেন। শ্রমিকদের কেন্দ্র করে অনেক শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে। এই সংগঠনের নেতারা শ্রমিকদের কষ্ট-ব্যথা-বেদনার খবর জানেন। কিন্তু গতানুগতিক ধারার শ্রমিকনেতারা শ্রমিকদের দুর্দশা কীভাবে দূর করতে হবে সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। বরং শ্রমিকদের পুঁজি করে কীভাবে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে হবে তা ভালো করে জানে। ফলে শ্রমজীবী মানুষরা প্রতি যুগে এ সব ট্রেড ইউনিয়ন ও নেতৃত্বের কাছে বারবার প্রতারিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। আল্লাহ মানবজাতিকে ন্যায় ও ইনসাফের বিধান দিয়েছেন তা যদি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতি পালন করা হয় তাহলে শ্রমিকের দুঃখ, ব্যথা-বেদনা দূর হবে। ইনসাফের মানদণ্ডের ওপর যার যার প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে।তিনি বলেন, একজন শ্রমিক যখন দেখবে তার শ্রমের ন্যায্য মূল্যায়ন করা হয়েছে তখন শুধু দেহের শক্তি নয় মনের শক্তি যুক্ত হবে। এতে উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যাবে। এতে কার্যত মালিকরা শ্রমিকদের থেকে বেশি লাভবান হবে। অন্যান্য ট্রেড ইউনিয়ন মালিক-শ্রমিকের সংঘাত লাগাতে চায়, আমরা এটা চাই না। মালিকরা উদ্যোক্তা না হলে শ্রমিকরা শ্রম খাটাবে কোথায়। আবার শ্রমিক না থাকলে কাকে দিয়ে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। আমরা মালিক-শ্রমিকের সুসম্পর্ক চাই। আমরা চাই মালিক-শ্রমিক কেউ কাউকে ঠকাবে না। এখান থেকে সবাই আমরা উপকৃত হবো। এই স্লোগান বাস্তবায়ন করতে চাই। এই বাগান থেকে চারা গাছ উঠিয়ে সমাজের সব জায়গায় রোপণ করতে চাই। আল্লাহ চাইলে এই ন্যায়ের বাগান তখন পরিপূর্ণ হবে। তখন বৈষম্য দূর হবে। আমরা শ্রমিক ময়দানে একটি বিপ্লব ঘটাতে চাই। এই বিপ্লবের জন্য প্রত্যেকটি কর্মীকে নিজের চিন্তা ও কর্মের জগতে আমূল পরিবর্তন তথা বিপ্লব ঘটাতে হবে। আমরা যদি নিজের মাঝে বিপ্লব ঘটাতে পারি তাহলে আমরা শ্রমিক অঙ্গনে প্রত্যাশিত বিপ্লব ঘটাতে পারব। আমরা হবো মর্যাদার অংশীদার। কিন্তু ওই বিপ্লব যদি না ঘটে তাহলে এই সমাজে আমাদের কারো মর্যাদা থাকবে না। আমরা যে যেখানে যে অবস্থায় থাকি না কেন সবাই অপদস্থ ও অপমানিত হবো। সবাই বারবার প্রতারিত ও বঞ্চিত হবো।সম্মেলনে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে ১. আজকের এই সম্মেলন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ছাত্র, শ্রমিক জনতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। আহত ও চিকিৎসাধীন ছাত্র, শ্রমিক-জনতার আরোগ্য কামনা করছি। সব শহীদ পরিবারকে সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহত সব ছাত্র, শ্রমিক-জনতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আহতদের যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ২. আজকের এই সম্মেলন মনে করে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি করে গণহত্যা ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে আহত করা মানবতাবিরোধী অপরাধ। হত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। ৩. আজকের এই সম্মেলন চাল-ডাল, তৈলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে। আজকের এই সম্মেলন শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে। ৪. আজকের এই সম্মেলনে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, দেশের শ্রমশক্তির ৬৫ ভাগ কৃষি খাতে নিয়োজিত। কিন্তু দেশে এখনো কাঙ্ক্ষিত কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে না ওঠার কারণে কৃষক পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। ফলে তাদের আর্থিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এই সম্মেলন সরকারি ও বেসরকারিভাবে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে এবং কৃষক যাতে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় সে জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ক্রয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বন্ধকৃত সার কারখানা চালু করতে হবে। ৫. আজকের এই সম্মেলন হোটেল শ্রমিক ও দোকান কর্মচারীসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন শ্রমিক নির্বিশেষে বিরাজমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের নিরিখে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কাঠামো পুনর্নির্ধারণের ও বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছে এবং পরিবহন রিকশা-ভ্যান, নির্মাণ, কৃষি, চাতাল, দর্জি ও তাঁত, স্টিল রি-রোলিং, ফার্নিচার, হকার্স, দোকান কর্মচারী, নৌ-পরিবহন ও করাতকল শ্রমিকসহ সর্বস্তরের শ্রমিকদের জন্য ট্রেডভিত্তিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা ও সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। ৬. আজকের এই সম্মেলন গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১২,৫০০/- টাকা প্রত্যাখ্যান করছে। গত বছর ন্যূনতম মজুরি আদায়ের আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩,০০০/- টাকা করার দাবি করছে। ৭. আজকের এই সম্মেলন বন্ধকৃত ২৫টি জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের যাবতীয় বকেয়া পাওনাদি অবিলম্বে পরিশোধ করার জোর দাবি জানাচ্ছে এবং বিএমআরই পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন করে ওই ২৫টি জুট মিলসহ বন্ধকৃত সব কল-কারখানা অবিলম্বে চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছে। ৮. আজকের এই সম্মেলন সরকারি, বেসরকারি ও গার্মেন্টসসহ সব শিল্প, কল-কারখানায় শ্রম আইন অনুযায়ী মহিলাদের প্রসূ
আপনার অনুভূতি কী?