শবে বরাতের করণীয়:
লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরী শা’বান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। উপমহাদেশে এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করে দেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুসলমান নফল ইবাদত এবং কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির আজকারের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করেন। عن علی بن طالبؓ قال قال رسول الله صلی الله علیه وسلم:اذاکانت لیلة النصف من شعبان فقوموالیلها وصوموا نهار فان الله تعالی ینزل فیها لغروب الشمس الی سماءالدنیا فیقول الا من مستغفرفاغفرله الامسترزق فارزقه الامبتلی فأعافیه الا کذاالاکذا حتّى یطلع الفجر.. (ابن ماجه.. حدیث:١٣٨٤) অর্থঃ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান: শা'বানের ১৫ তম রাত যখন তোমাদের সম্মুখে এসে যায় তাতে তোমরা ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে রাতটি জাগ্রত রাখ এবং পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখো। কারণ সূর্যাস্তের সাথে আল্লাহ পাক প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বান্দাদেরকে লক্ষ করে বলেন, আছো কি কোন ক্ষমা প্রার্থী? আমি ক্ষমা করে দেই। আছো কোন রিজিক অন্বেষু তাকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেই? আছো কি কেউ বিপদগ্রস্ত তাকে আমি বিপদ মুক্ত করে দেই? এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত ডাকতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ-১৩৮৪, শোয়াবুল ঈমান-৩/৩৭৮) উল্লেখিত হাদীস দ্বারা দুটি জিনিস প্রমাণিত হলো। প্রথমতঃ রাত্রি জাগরণ (ইবাদতের মাধ্যমে), দ্বিতীয়তঃ পরবর্তী দিনের রোযা রাখা। উল্লেখিত হাদীস খানার মধ্যে একজন বর্ণনাকারী ইবনে আবী সাবরার (স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা) এর কারণেই কেবল হাদীসটি দুর্বল হাদীস বলে গণ্য। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই হাদীসটি মাওযু বা জাল হাদিস নয়। তাই কোন ইমাম বা মুহাদ্দিসীনে কেরাম জাল হাদীস বলে উল্লেখ করেন নি। দুর্বল হাদীসের উপর আমল যইফ বা দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কিরুপ তা নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে মতানৈক্য পরিলক্ষিত হয়। কেউ বলেছেন তা দ্বারা কোন আমল মুস্তাহাব প্রমাণ হতে পারে না। কিন্তু মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম যাদের মধ্যে আল্লামা ইমাম নববী (রহঃ) (কিতাবুল আযকার লিন্নবীঃ ৭ আল্লামা ইবনে হুমাম (রহঃ) ফতহুল ক্বাদীরঃ ১/৪৬৭) আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী রহ. (ফতহুল মুবীন-৩২) আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষৌভী রহ. (আল-আজবিবাতুল ফাযিলাহ-৫৭) বলেন দূর্বল হাদীস দ্বারা অবশ্যই মুস্তাহাব প্রমাণিত হবে। সুতরাং তাঁদের মতে শবে বরাতের ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ এবং রোজা সুন্নত ও মুস্তাহাব। শবে বরাত যেহেতু বরকত পূর্ণ রাত্রি, ক্ষমা ও চাহিদা মেটানোর ঘোষণার রাত্রি, তাই এই রাতে বিনিদ্র থেকে নফল নামাজ, জিকির-আজকার, দোয়া ইস্তেগফার, ক্ষমা প্রার্থনা, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতার জন্য কেঁদে কেঁদে আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত। রোজা সারা রাত ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে পরবর্তী দিন একটি রোজা রাখবে। হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ বলেন, শাবান মাসের ১৫ তম দিনে রোযা রাখা মুস্তাহাব। (যাওয়ালুস সিনানহ-১০) মুফতি আজম মুফতী শফী সাহেব বলেন, ১৫ শাবানের সুন্নত আমল সমূহের মধ্যে রোজাও অন্তর্ভুক্ত। (শবেবরাত-৮ ) তবে এ ব্যাপারে আল্লামা মুফতি তকী উসমানী মাদ্দাজিল্লুহু লিখেন, হাদিস শরিফের বিশাল ভান্ডারে একটিমাত্র দুর্বল হাদীসে এই রোজার কথা পাওয়া যায়। তাই অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া উচিত নয়। তবে হ্যাঁ, গোটা শাবান মাস রোজা রাখার কথা বহু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আবার হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়ামে বীযের (মাসের ১৪, ১৫ ও ১৬ তারিখ) রোজা রাখতেন। সুতরাং কোন ব্যক্তি এই দুটি কারণ কে সামনে রেখে ১৫ শাবান রোজা রাখে, তবে সে প্রতিদান পাবে ইনশাআল্লাহ। তবে শুধু ১৫ শাবানের কারণে রোজাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সুন্নত বলে দেওয়া অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে ঠিক নয়। শরীয়তের প্রত্যেক বিষয়কে তার আপন গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। দ্বীন হচ্ছে সীমারেখা সংরক্ষন রাখার নাম নিজের জ্ঞান খাটিয়ে কোন কিছুকে কম বেশি, আগে-পিছে করার নাম দ্বীন নয়। গোরস্থানে গমন এই রাত্রে কবরস্থানে গিয়ে জিয়ারতের কথা হাদিস শরীফে পাওয়া যায় যেমনঃ عن عاٸشةؓقلت فقدت رسول الله صلی الله علیه وسلم: لیلةفخرجت فاذاهوبالبقیع فقال:اکنت تخافین أن یحیف الله علیک رسول له؟ فقلت یارسول الله إنی ظننت أنک اتیت بعض نساٸک.فقال:ان الله عزوجل ینزل لیلةالنصف من شعبان الی السماءالدنیافیغفرلأکثرمن عددشعرغنم کلب…(ترمذی شریف.٧٣٩) অর্থ হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন আমি এক রাতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয্যার পার্শ্বে না পেয়ে খুঁজতে বের হয়ে জান্নাতুল বাকীতে পেলাম। তিনি আমাকে দেখে বললেন আয়েশা, তুমি কি আশঙ্কা করেছো আল্লাহ ও রাসূল তোমার সাথে খিয়ানত করেছেন। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল স: আমি ভেবেছিলাম আপনি অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে গমন করেছেন। অতঃপর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমান ১৫ শাবানের রাত্রে আল্লাহ পাক প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং ‘বনু কলব’ গোত্রের পালিত ছাগলের শরীরের পশম এর চেয়েও অধিক সংখ্যক বান্দাহকে তিনি ক্ষমা করে দেন। (তিরমিযী শরীফ-৭৩৯, ইবনে মাজাহ-১৩৮৫) হযরত মুজাদ্দিদে থানবী রহঃ জাওয়ালুস সিনাহ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ১০) বলেন, এ রাত্রে কবর জিয়ারত করা মুস্তাহাব। অতএব পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে জিয়ারতের জন্য যাওয়া (জরুরী মনে না করে) দোষণীয় নয়। তবে বাধ্যতামূলক বা আনুষ্ঠানিকতা বা রসুম হিসেবে যাওয়া মোটেই জায়েজ হবে না। এই বরকত পূর্ণ রাত্রি থেকে কারা বঞ্চিত এই ফজিলত ও বরকত পূর্ণ রাত্রিতেও যারা আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত তারা হলোঃ ১. আল্লাহ তা’আলার সাথে (যাতে বা গুণাবলীতে) শিরক-কারী অপরের সাথে বিদ্বেষভাব পোষণকারী ২. অপরের সাথে বিদ্বেষভাব পোষণকারী ৩. অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যাকারী ৪. হিংসুক ৫. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ৬. মাটিতে কাপড় হেঁচড়িয়ে বিচরণকারী ৭. মদ্যপানকারী ৮. পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ৯. আত্মহত্যাকারী

আপনার অনুভূতি কী?






