সুন্দরবন অপহরণ মুক্তিপণে বনজীবীরা পেশা পরিবর্তন করছে

আল-হুদা মালী শ্যামনগর উপজেলা প্রতিনিধি : সুন্দরবনে বনদস্যূদের আনাগোনা মারাত্মকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।উপকূলীয় অঞ্চলে রাত পোহালেই সোনা যায় নতুন নতুন খবর জিম্মি, অপহরণ মুক্তিপণের খবর। ফলে সুন্দরবনের বনজীবীরা পেশা পরিবর্তন করে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে। এতে সরকার পড়বে রাজস্ব সঙ্কটে বলে জানিয়েছে পশ্চিম সুন্দরবনের সদ্য যোগদানকারী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল করিম। পশ্চিম বন বিভাগে কৈখালি, শৈলখালি, ভেটখালি, কালিঞ্চে, গোলাখালি, টেংরাখালি, পার্সেখালি, ধুম ঘাট,মরাগাং, চুনকুড়ি, সিংহড়তলি, হরিনগর, মথুরাপুর, কুলতলি, দক্ষিণ কদমতলা, পূর্ব কালিনগর, মৌখালি, সেন্টাল কালিনগর, মুন্সিগঞ্জ, পানখালি, দাতিনাখালি, বুড়িগোয়ালিনী, পোড়াকাটলা, দূর্গাবাটি, বড় কূপট, ছোট কূপট, বিড়ালক্ষী, নওয়াবেকি, গোঁডাড়া, ঝাপালি, ঘোলা, প্রতাব নগর, খুঁটিকাঁটা, গড় কুমার পুর, চন্ডীপুর, পাতাখালি, ঝাঁপা, কামল কাঠি, গাবুরা, জেলিয়া খালি, লেবুবুনিয়া, গাগড়া মারি, পার্সে মারি, চাঁদনী মুখা, দৃষ্টি নন্দন, ৯ নং সোরা ডুমুরিয়া, হরিশ খালি, কালীবাড়ি, কয়রার জোরসিং, আন্টি হারা, গোল খালি, বেঁতকাশী, হরিহার পুরসহ্ আরো শতাধিক গ্রামের বনজীবীরা পড়েছে বড়ো বিপাকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করা খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া আগামী পহেলা জানুয়ারি হতে দুই মাসের জন্য কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হিসাবে সরকারি ভাবে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ। সব মিলে বনজিবিরা এলাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন শহরে ভিন্ন পেশায় কাজের সন্ধানে চলে যাচ্ছেন। জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে খুলনা রেঞ্জের দাকোপে মুক্তিপণের দাবিতে জেলে অপরহণের কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এর আগে সাতক্ষীরার কৈখালিতে এক জেলে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে ফিরে এসেছেন। হঠাৎ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় জেলে-বাওয়ালিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বনের কয়েকটি স্থানে বনদস্যু বাহিনীর টোকেন ছাড়া মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করা যাচ্ছে না। একাধিক জেলে জানিয়েছেন, সুন্দরবনের নদী-খাল দিয়ে নৌকা নিয়ে যাওয়ার সময় বনদস্যুরা তাদেরকে ডেকে মাছসহ মালামাল লুটের কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে। তবে এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন দাবি করে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত রাখতে এর মধ্যে অভিযান শুরুর কথা বলছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। আরো জানা গেছে, গত ২০ আগস্ট সন্ধ্যায় সুন্দরবনের কচুখালী এলাকা থেকে সফিকুল ইসলাম নামের এক জেলেকে অপহরণ করে বনদস্যুরা। অপহৃত সফিকুলের বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টু জানান, সফিকুলসহ আরও কয়েক জেলে সুন্দরবনে নদীতে মাছ ধরতে যান। একপর্যায়ে কচুখালী এলাকায় তারা বনদস্যুদের কবলে পড়েন। ওই সময় সফিকুলের অন্য সঙ্গীরা পালিয়ে আসতে পারলেও তিনি পারেননি। তাকে বনদস্যুরা ধরে নিয়ে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে বনদস্যুরা অপহৃত জেলের পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একইভাবে গত ১৬ সেপ্টেম্বর খুলনার দাকোপের কালাবগি এলাকায় অহিদুল শেখ নামের এক জেলে মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাকে সুন্দরবনের শরবত খালি খাল থেকে অপহরণের পর পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণের পর তাকে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় ট্রলারে বেঁধে রাখে দুস্য বাহিনী।দাকোপের সুতারখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির জানান, হঠাৎ করেই বনদস্যু বাহিনী আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। পরপর কয়েকটি ঘটনায় জেলে অপহরণের পর এলাকায় উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। এসব ঘটনা এরই মধ্যে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আলোচনায় ছয় বনদস্যু বাহিনী সরকারের পক্ষ থেকে বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হলে ২০১৬ সালের ৩১ মে জলদস্যু ‘মাস্টার বাহিনী’ আত্মসমপর্ণ করে। ৫১টি আগ্নেয়াস্ত্র, প্রায় পাঁচ হাজার রাউন্ড গুলি ও তাদের ব্যবহারের সিক্স সিলিন্ডারের ট্রলার নিয়ে ১৩ সদস্যের দলটি র‍্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময় ৩২টি দস্যু বাহিনী আত্মসমপর্ণ করে। ২০১৮ সালে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পর আবারও ভীতি ছড়াচ্ছেন সুন্দরবনের দস্যু বাহিনী।জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সাতক্ষীরা রেঞ্জ মঞ্জু বাহিনী মিলন পাটোয়ারী বাহিনী ও আলিম বাহিনী নাম তাদের প্রত্যেক বাহিনীর ৭-৮ জন করে সদস্য রয়েছে। সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জ ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় তাদের দেখা যায়, জেলেদের কাছ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তারা মুক্তিপণ আদায় করে। অনেক জায়গায় নৌকাপ্রতি টোকেন ফি আদায় করে। টাকা না দিলে জেলেদের অপহরণ করা হচ্ছে তবে একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তারা জানান, এর আগে ২০২৩ সালে সুন্দরবনের গহীনে শেলা নদী থেকে বনদস্যুর উৎপাত শুরু হলে মাসুম ফরাজী, হাছান কবিরাজ ও আলমগীর হোসেন হাওলাদার নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দস্যুরা জেলে বহরে হামলা ও লুটপাট চালিয়ে ১৫ জেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণের দাবি করে। এ ঘটনার পর র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বন বিভাগ ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে তিন জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করে। এবারও পরিস্থিতি বিবেচনায় যৌথ অভিযান চালানো হবে। সুন্দরবন থেকে ফিরে আসা জেলেরা জানিয়েছে আগস্ট ২৪ থেকে অধ্যপতি পর্যন্ত প্রায় অর্ধ শত জেলেকে মুক্তি পণের দাবিতে অপহরণ করছে এই সমস্ত বনদস্যূরা। তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের মুক্তিপন নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান জানান বনদস্যূ আতঙ্কে জেলেরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারছে না।সে কারণে একদিকে বন বিভাগের পাস পারর্মিট একবারে কমে গেছে অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সাতক্ষীরা সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান জানান, জেলে অপহরণের বিষয়টি জানার পর থেকে সুন্দরবনে টহল জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন জানান, জেলেরা সুন্দরবন থেকে ফিরে এসে বনদস্যুদের ব্যাপারে এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের জানাচ্ছেন। কৈখালিতে ৩-৪ জন জেলেকে মারধর করা হয়েছে। এসব ঘটনা র‌্যাব, কোস্টগার্ডকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বন বিভাগও বনদস্যুদের অপৎপরতা বন্ধে

ডিসেম্বর 23, 2024 - 19:02
 0  10
সুন্দরবন অপহরণ মুক্তিপণে বনজীবীরা পেশা পরিবর্তন করছে

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow