অভয়নগরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে মাদকদ্রব্য ধ্বংস হচ্ছে- যুবসমাজ
মোঃশফিকুল ইসলাম পিকুল (স্টাফ রিপোর্টার অভয়নগরঃ যশোরের অভয়নগরে মাদকের নীল ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। দিন দিন এর প্রভাব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিতে গলিতে। প্রতিনিয়ত আনাচে-কানাচে বিক্রি হচ্ছে মরণ নেশা মাদক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সমস্ত মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে, বাংলা মদ,গাঁজা, ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল সহ ভারতীয় ব্র্যান্ডের আরো নাম নাজানা মাদক। রকমারি মাদকের প্রতি তরুণদের আসক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বিধ্বংসকারী মাদকের বিস্তার সমাজে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সচেতন অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন । মাদকাসক্ত সন্তানদের কারণে এক একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মাদকাসক্ত সন্তানকে নিয়ে পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে দেখা যায়, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও মাদকাসক্ত জড়িয়ে পড়ছে। যত্রতত্র চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য। প্রতিনিয়ত রয়েছে বিভিন্ন নেশার আড্ডা, এর চাহিদা মেটাতে তরুণ তরুণীরা ক্রমেই নেমে পড়েছে অপরাধ জগতে। অনেক শিক্ষার্থী নেশার মোহে পড়ে সম্ভাবনাময় জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এই মাদকই হচ্ছে সকল অকল্যাণ ও অমঙ্গল এর প্রধান উৎস। মাদকের নীল নেশায় ক্ষয়ে যাচ্ছে আমাদের তারুণ্য। মাদকতার গহীন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে যুব সমাজ। মাদক সেবনকারীরা মানব রুপী নরপশুতে পরিণত হচ্ছে। মরণ নেশা মাদক সেবন করে তার মোহিনী নেশায় বিভোর হয়ে কলঙ্কের প্রতীক হয়ে নির্দ্বিধায় দিনানিপাত করছে । বর্তমানে মাদক সেবন যেন একটি সামাজিক রীতিনীতিতে এমনকি আধুনিকতায় রূপ নিয়েছে । নাবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই মাদকতার বিষাক্ত প্রেমে আসক্ত। ইহা সেবন করে মাতলামির শেষ প্রান্তে পৌঁছে স্বীয় কাণ্ডজ্ঞান বিবেক বুদ্ধি কে খুইয়ে তার মাতা- পিতা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে প্রতিনিয়ত অশালীন আচরণ করছে। এমনও খবর পাওয়া গেছে, মাদক সেবনকারীরা তার পিতা মাতাকে করছে শারীরিক ও মানসিক ভাবে লাঞ্ছিত। লোক লজ্জার ভয়ে অনেক পিতা-মাতা নীরবে তা সহ্য করে যাচ্ছে। এ সমস্ত মানব রুপী দানবেরা স্বীয় গৌরব ও কৃষ্টি কালচারকে ভুলতে বসেছে। সভ্য নামের নোংরামি অসভ্যতা আজ মানব সমাজকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার গাজীপুর, রাজঘাট, তালতলা, প্রফেসরপাড়া, চলিশিয়া,পায়রা,ধোপাদি, ড্রাইভারপাড়া, বনগ্রাম, সুন্দলী, সরদার মিল, ভাঙ্গাগেট, চেঙ্গুটিয়া প্রেম বাগ, ভৈরব ব্রিজের আশেপাশে, দেয়াপাড়া, শংকরপাশা, পুড়াখালি, মথুরাপুর, রাঙ্গারহাট ,হরিশপুর, পাচুরিয়া, বাঘুটিয়া,সিংগাড়ী, গোপীনাথপুর, সিদ্ধিপাশা সহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বকাটে যুবকেরা মাদক সেবনসহ তা বিক্রি ও করছে। এসব এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেখা যায় বকাটে যুবকদের আনাগোনা। এরা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরো অভিযোগ উঠেছে যে, বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র ছায়ায় থেকে বুক ফুলিয়ে দেদারসে করে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। এলাকার সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গগণ এর নারী নক্ষত্রের খবরা খবর সবই জানেন কিন্তু কেন যে, এ মাদকের উপর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে নীরব ভূমিকা এতদিন পালন করে আসছেন তা আমার বোধগম্য নয়। তাই এই নীরবতা থাকার কারণে আজ মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবির তালিকা, দিনে দিনে দীর্ঘ হচ্ছে। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছেনা এ অবৈধ মাদক কারবার। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আজকের যুবসমাজ। অভয়নগরে মাদকের বিস্তৃতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তরুণ ও যুব সমাজ ব্যাপকভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমান সমাজে মাদক জন্ম দিচ্ছে একের পর এক অপরাধ। শুধু মাদকের এই মরণ নেশার কারণে ছেলের হাতে পিতা-মাতা, স্বামীর হাতে স্ত্রী, ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হচ্ছে এমন খবর অনেক পত্র-পত্রিকায় দেখা গেছে। মাদকের ছোঁয়ায় সম্ভাবনামায় তরুণরা অধঃপতনের শিখরে উপনীত হচ্ছে। মাদকের ক্ষতিকারক ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবেক অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচালক, মানসিক হাসপাতালের জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ঝিনাইদহ জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ কেরামত আলী ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, মাদকদ্রব্য হল একটি রাসায়নিক দ্রব্য। যা গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব পড়ে ও আসক্তি সৃষ্টি করে। মাদকের প্রভাবে মানুষের আচ্ছন্নতা মেজাজ, শারীরিক মানসিক ও রক্তচাপ পরিবর্তন হয়। মাদক গ্রহণে ব্যক্তির এমন এক ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়,যার ফলে মাদক সেবনকারী ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অনুভূতির এক ধরনের পরিবর্তন আসে যাকে তারা নেশা হিসেবে বিবেচনা করে। মাদক গ্রহণ করলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং মাদকদ্রব্যের উপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি দ্রব্যটি গ্রহণের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ব্যক্তির এই অবস্থাকে বলে মাদকাসক্তি। ৫ নং শ্রীধরপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও হ্যান্ড লিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা মোঃ মাসুদ রানা বলেন, সুশীল সমাজ ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মাদক। মাদক একটি ভয়াবহ সমস্যা পুলিশ প্রশাসনকে আরো এ বিষয়ে আন্তরিক হতে হবে, কারণ দেখা যাচ্ছে মাদকমুক্ত এলাকায় বেশিরভাগ মাদক সেবন ও বিক্রি চলছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে থানা পুলিশের কি ভূমিকা রয়েছে তা জানতে চাইলে অভয়নগর থানার পুলিশ পরিদর্শক---------জানান।
আপনার অনুভূতি কী?