অভয়নগরের বাঘুটিয়ায় গ্রাম্য আদালতে বিচার, দুই সহোদরের প্রায় ৩০ বছর পর মিলন
সব্যসাচী বিশ্বাস অভয়নগর উপজেলার ৬ নং বাঘুটিয়া ইউনিয়নের জয়খোলা গ্রামে প্রায় ৩০ বছর ধরে চলে আসা সম্পত্তি নিয়ে কোন্দল মিটে গেল। গত ১৪ অক্টোবর ২০২৪ মঙ্গলবার বিকাল চারটায় বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সুযোগ্য চেয়ারম্যান জনাব তোয়েবুর রহমানের নেতৃত্বে এক গ্রামীণ আদালত বসে। প্রায় ছয় ঘন্টা ধরে সম্পত্তি নিয়ে কোন্দলের সকল ঘটন অঘটন পর্যালোচনার মাধ্যমে বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলে আসা এই কোন্দলের অবসান ঘটে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জয়খোলা গ্রামের দুই সহোদর বাবু রাজকুমার রায় ও বাবু শুনীল চন্দ্র রায় তারা দুই সহোদর ৩০ শতাংশ জমি নিয়ে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। তা এক পর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নেয়। সেই অবধি দুই ভাই একত্রিত হতে পারিনি। বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সামাজিক সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের চেষ্টায় তার অবসান ঘটাতে ব্যর্থ হয়। আজ হতে প্রায় দুই মাস আগে দুই সহোদরের সন্তানেরা কোন্দলযুক্ত সেই জমি চাষাবাদ নিয়ে পূনরায় সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। ছোট ভাই বাবু সুনীল চন্দ্র রায়ের দুই ছেলে সন্তান উক্ত ৩০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ করে। তখন বড় ভাই রাজকুমার রায়ের ছেলে সন্তানেরা সহিংসতায় জড়ায়। তারপর তারা স্থানীয় ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এর নিকট ন্যায্য বিচারসহ এই কোন্দলের অবসান দাবি করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ১৪ অক্টোবর বিকাল চারটায় জয়খোলা গ্রামের শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী পূজা মন্দিরের সামনে গ্রাম্য আদালত স্থাপন করেন এবং এই কোন্দলের অবসান ঘটিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে উক্ত ৩০ শতাংশ জমি সুষম বণ্টন করে তাদের মধ্যে মিল বন্ধনের ব্যবস্থা করেন। যারা জমি দখলের জন্য সহিংস হয়ে ওঠে তাদেরকে আর্থিক দন্ডে দন্ডিত করেন এবং সকলেই তা মেনে নিয়ে মিলে মিশে সখ্যতা নিয়ে বসবাসের আশ্বাস প্রদান করে। এ বিষয়ে বাবু রাজকুমারের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বিগত তিরিশ বছরের ভাইয়ের প্রতি সকল অভিমান অভিযোগ তুলে ধরেন এবং এই গ্রামীণ আদালতের বিচার মেনে নিয়ে ভাইয়ের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। অপরদিকে বার্ধক্যের ভারে নাজুক বাবু সুনীল চন্দ্র রায় জানান, আমি দাদার কাছে আমার সকল অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে দাদার কোলে আদর স্নেহ নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে চাই। তিনিও এ সকল অভিযোগ অভিমান ভুলে গিয়ে দাদার সাথে মিলে মিশে বসবাসের প্রতিশ্রতি দেন। গুরুত্বপূর্ণ এ বিচারিক কার্য পরিচালনায় স্থানীয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন এবং সুষ্ঠু বিচারের সকল কার্যক্রম পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাঘুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকরাম বিশ্বাস তিনি স্বয়ং বিচারিক কার্যক্রম সঞ্চালনা করেন, বাঘুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জয়খোলা গ্রামে বসবাসরত শিক্ষক জনাব সব্যসাচী বিশ্বাসের সাথে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অনেকদিন ধরে দেখছি তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যকার সম্পর্ক অবনতির অবস্থা, আশেপাশের ততকালীন ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ অনেকবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তা নিষ্পত্তি সম্ভব হয়নি। কোনো এক অজানা কারণে তারা মিলতে পারিনি বিগত ৩০ বছর। আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম, সম্পূর্ণ বিচারিক কার্যক্রম লক্ষ্য করেছি, শৃঙ্খলার মধ্যে রেখে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। আমার জীবনে প্রথম দেখেছি এরূপ গ্রামীণ আদালত স্থাপন করে কোনো একটি জটিলতর সমস্যার সমাধান। অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জনাব তোয়েবুর রহমান। উক্ত বিচারিক কার্যক্রমে উপস্থিত বিএনপির নেতৃবৃন্দরা হলেন মো.ইকরাম বিশ্বাস‚ সাধারণ সম্পাদক ৬ নং বাঘুটিয়া ইউনিয়ন বি এন পি, মোল্যা মোস্তাফিজুর রহমান ইউনিয়ন বি এন পি নেতা, জাহিদুল ইসলাম (জনি) সহ সাধারণ সম্পাদক ৬ নং বাঘুটিয়া ইউনিয়ন বি এন পি, মোঃ হোসনে আলী গাজী সভাপতি ৬নং ওয়ার্ড বি এন পি ও ইউনিয়ন বি এন পি নেতা, মোঃ কবিরুল ইসলাম ইউনিয়ন বি এন পি নেতা, মোঃ ইনামুল হক সাধারণ সম্পাদক ৩নং ওয়ার্ড বি এন পি, মনিরুল ইসলাম (মন্টু) ইউনিয়ন বি এন পি নেতা, বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ও সমাজসেবক, মেল্যা ওমর ফারুক সভাপতি ৯নং ওয়ার্ড বি এন পি, মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব সাধারণ সম্পাদক ৪নং ওয়ার্ড বি এন পি, মোঃ শরিফুল ইসলাম সভাপতি সেচ্ছাসেবক দল ৬নং বাঘুটিয়া ইউনিয়ন, রাজু আহমেদ মেম্বার ৫নং ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বি এন পি নেতা,হাফিজুর রহমান মেম্বার ৩নং ওয়ার্ড, জিয়াউর রহমান চৌধুরী মেম্বার ৯নং ওয়ার্ড, মাহাবুর সরদার মেম্বার ১নং ওয়ার্ড। বিশ-ত্রিশ বছরের জটিতার অবসান দেখে গ্রামবাসী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এবং গ্রামবাসী চেয়ারম্যান ও বাঘুটিয়া বিএনপির উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান ও পরবর্তিতে এরূপ দৃষ্টান্ত স্থাপনের আশা করেন।
আপনার অনুভূতি কী?