ইটভাটায় যাচ্ছে কৃষি জমির উর্বর মাটি কমছে খাদ্য উৎপাদন, ধ্বংস হচ্ছে সড়ক, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুরঃ মেহেরপুরে দিন দিন আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে ইটভাটা। আর সেই সাথে বাড়ছে ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি। এর ফলে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব বিস্তার ছাড়াও একদিকে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ, অন্যদিকে বড় বড় ড্রাম ট্রাকে এসব মাটি পরিবহণে নষ্ট হচ্ছে সড়ক। সেই সঙ্গে পরিবহণের সময় মাটি উড়ে নষ্ট করছে পরিবেশ। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। শিগগিরই এসব বন্ধে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদন কমতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ইটভাটা মাটি কাটার মহোৎসব চলছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেয়া হলেও অদ্যাবদি কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর ইটভাটা মালিক সমিতি বলছে, বিশেষ ব্যবস্থায় এসব ইটভাটা চালানো হচ্ছে। সবারই ইটের প্রয়োজন আছে। তবে প্রশাসন বলছে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেহেরপুরে ৯২ টি ইটভাটার মধ্যে একটি ইটভাটারও অনুমতি ও পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই । সব গুলো ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কোন কোন ভাটায় করাত কল দিয়ে কাঠ ফাড়ানো হচ্ছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে ইটভাটা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইটভাটার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বরং চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার যাতে না হয় সেজন্য ইটভাটার আশেপাশে বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহল। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের চোখের সামনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে, ঘনবসতি এলাকায় ও ফসলের মাঠের কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশ বান্ধব কয়লার বিপরীতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। অবৈধ ট্রলির মাধ্যমে আশপাশের এলাকার ফসলি জমির মাটি এনে তৈরি করা হচ্ছে ইট। অবৈধ ইটভাটার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে মানুষ। শুধু তাই নয়, সরকারি জায়গায় প্রভাবশালী কয়েকজন গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। বিশেষ করে মহাম্মদপুর বাওট, ছাতিয়ান বামন্দী ধানখোলা গাড়াডোব এলাকাতে ইটভাটা পরিবেশের উপর বেশি প্রভাব ফেলছে। এসব ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে কথিত ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ইনামুল হক প্রশাসনের নামে চাঁদা আদায় করেন। বড় ভাটা থেকে একলাখ ও ছোট ভাটা থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন প্রতি বছর। ভাটা মালিকগন চাঁদা পরিশোধ করে নির্বিঘেœ তাদের ব্যবসা চালিয়ে যান বছরের পর বছর। এছাড়া সরকারি জায়গার মাটি কেটে ইট ভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়। দিনে ও রাতের আধারে ড্রাম ট্রাক ও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলিতে করে বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি এনে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন। সড়কগুলোতে এসব অবৈধ যানবাহনের বে-পরোয়া চলাচলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিবছরের মতো এবারও ইট তৈরির মৌসুমে প্রতিদিন ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে বিরুপ প্রভাব পড়ছে ফসলের উপর। ভাটার আশে পাশের কোন জমিতে আর আগের মতো ফসল হচ্ছে না। অনেকেই বাধ্য হয়ে জমির টপ সোয়েল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই আবার ওই জমিতে পুকুর খনন করছেন । সেই পুকুরের মাটিও চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। মাটি পরিবহনের কারণে রাস্তায় মাটি পড়ে ধুলা বালি ও বৃষ্টি কাদা সৃষ্টি হয়। এতে যেমন দুর্ঘটনা ঘটে অন্যদিকে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে তাড়াতাড়ি। অনেক রাস্তা একেবারই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গাংনী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ইনামুল হক জানান, বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা মেটানোর জন্য টাকা নেয়া হয় ইটভাটা মালিকের কাছ থেকে। কারো পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ ও প্রশাসনিক অনুমোদন নেই। কিভাবে চলছে এ ইটভাটা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘কীভাবে চলে আর চালাতে হয় সেটা সকলেই জানে, বিষয়টি প্রশাসনও জানে। আপনারাও জানেন। এটা নতুন কিছু নয়’। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, বিশেষ কারণে ইটভাটগুলো স্থাপিত হয়েছে। এটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সরুপ। তবে কীভাবে ভাটাগুলো চলতে তা দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাসখানেক আগেও আপনি ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিয়েছিলেন কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, এমন কথার কোন জবাব মেলেনি।

ডিসেম্বর 28, 2024 - 12:41
 0  4
ইটভাটায় যাচ্ছে কৃষি জমির উর্বর মাটি কমছে খাদ্য উৎপাদন, ধ্বংস হচ্ছে সড়ক, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow