চিরিরবন্দরে ওয়াকফকৃত সম্পত্তি দখল করতে মরিয়া আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রহিম
মোরশেদ উল আলম, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে রুপের পরিবর্তন করে হাসিল করছেন স্বীয় স্বার্থ। স্বীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য তিনি পোশাকের মতো করছেন বারবার দল বদল। কথা উঠেছে একই অঙ্গে তার কত রুপ। বর্তমানে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ওয়াকফকৃত সম্পত্তি দখল করতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। গড়ে তুলেছেন একটি দুষ্ট চক্রের বাহিনী। এই বর্ণচোরা ব্যক্তিটি হলেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের উত্তর পলাশবাড়ি গ্রামের মৃত বোরহান উদ্দিনের ছেলে মো. আব্দুর রহিম। তিনি ১৯৯০ সালে উপজেলার উত্তর পলাশবাড়ি গ্রামের ঘিনা মোহাম্মদ শাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফকৃত সম্পত্তির (ইসি নং ১০৪৬১) মোতওয়াল্লী পদে নিয়োগ পান এবং ওয়াকফ প্রশাসন হতে ৩ বছরের জন্য মসজিদের ৭ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। এরপর তিনি আর ওই উপদেষ্টা কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির কোন আবেদন করেননি। তিনি ওয়াকফকৃত সম্পত্তি দখলের অভিপ্রায়ে জোরপূর্বক মসজিদের ইমামতি গ্রহণ করেন। মসজিদের মুসল্লীদের মধ্যে বিভেদ ও মত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। ফলে মসজিদের মুসল্লীরা বিভক্ত হয়ে আলাদা আরেকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সুযোগে আব্দুর রহিম স্বল্প সংখ্যক তার অনুগত মুসল্লীদের নিয়ে ওই ওয়াকফ সম্পত্তির অর্থ লুটপাট ও স্বীয় দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারিক সভাপতি থাকাকালে উত্তর পলাশবাড়ি জব্বারিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আব্দুর রহিম। নিয়োগ বাণিজ্যসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নেয়ার জন্য স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি নির্বাচনে নির্বাচনী কাজে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে হাতিয়ে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ। গত ২৭/১১/২০২১ ইং তারিখে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঘিনা মোহাম্মদ শাহ ওয়াকফ এস্টেটের তার সভাপতিত্বে ভুয়া স্বাক্ষরযুক্ত উপস্থিতি, সমর্থক ও প্রস্তাবকের অজ্ঞাতসারে একটি ওয়াকফ কমিটি গঠন করে গত ২৬/১২/২০২১ইং তারিখে তা অনুমোদনের জন্য ওয়াকফ প্রশাসনের নিকট দাখিল করেন। তারই প্ররোচনায় গত ০৬/০১/২০২২ইং তারিখে মোতওয়াল্লী মাসুদ বিল্লাহর কমিটির সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াজেদ আলী, মো. আফতাবউদ্দিন, মো. মজিবর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে মো. মাসুদ বিল্লাহর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উপস্থাপন করে। পরবর্তীতে আব্দুর রহিম গোপালগঞ্জের জনৈক দালালের মাধ্যমে ওয়াকফ প্রশাসনে লবিং করে গত ১০/১১/২০২২ইং ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য শফিকুল ইসলামকে মোতওয়াল্লী করে একটি ভুয়া, বানোয়াট এবং অগ্রহণযোগ্য গঠিত কমিটিকে বেআইনীভাবে অনুমোদন করে নেন। এ বেআইনী কমিটির বিরুদ্ধে মো. মাসুদ বিল্লাহ মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে গত ১৩/১২/২০২২ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট ওই কমিটির ওপর ৬ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ ও সকল বিবাদীদের উপর রুল জারি করে। পরবর্তীতে মো. মাসুদ বিল্লাহর আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা জিপি মহোদয় মাসুদ বিল্লাহর কমিটিকে স্টেটের সব কাজ দেখাশোনা করার মতামত দেন। কিন্তু আব্দুর রহিমের ইন্ধনে আওয়ামী লীগ প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে বা তার কমিটিকে কোন কাজ করার সুযোগ দেননি। মাসুদ বিল্লাহর কমিটি কিছু অমাড়াইকৃত ধান মাড়াই করতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্দুর রহিমের পক্ষের লোকজন লাঠিসোডা নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করে এবং দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মাসুদ বিল্লাহ গংদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করে। শুধু তাই নয়-প্রশাসনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে আব্দুর রহিম ও শফিকুল ইসলাম গত ২৭/১১/২০২২ইং তারিখের পূর্বের ইরি-বোরো ধানের চুক্তি ও আমন ধানের টাকা আধিয়ারদের নিকট থেকে উত্তোলন ও পুকুরের মাছ বিক্রির টাকা আতœসাৎ করেন। তার এসব অপকর্ম ও স্বৈরাচারীতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যাতে কোনরকম বিঘ্ধসঢ়;ন না ঘটে সেজন্য তিনি রাজনৈতিক দল বদলে চলেছেন। তিনি কখনও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, কখনও বিএনপির বিদ্রোহী গ্রæপ আবার কখনও তিনি আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী আব্দুর রহিম ও শফিকুল ইসলাম গংদের বিরুদ্ধে ওই ওয়াকফ স্টেটকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গত ২৯ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের পলাশবাড়ি জব্বারিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় ঘিনা মোহাম্মদ শাহ ওয়াকফ এষ্টেট কমিটি ও ওয়ারিশদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ওই ওয়াকফ এষ্টেট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন কল্পে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক মনোযোগসহকারে শ্রবণ করেন এবং তা কাটিয়ে ওঠার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার পরামর্শ প্রদান করেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম শরীফুল হক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ফজলে এলাহী, একাডেমিক সুপারভাইজার প্রাণকৃষ্ণ ঘরামী, পলাশবাড়ি জব্বারিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ রেজাউল ইসলামসহ মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
আপনার অনুভূতি কী?