কোটচাঁদপুরে জামায়াত নেতা এনামুল হত্যায় পুলিশ সুপার ও সাবেক দুই সংসদ সদস্য সহ ১৯ জনের নামে আদালতে মামলা,

জাহাঙ্গীর আলম, কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে বিচার বহির্ভূত হত্যা করা হয়  জামায়াতে ইসলামীর নেতা শিক্ষক এনামুল হককে। এ হত্যাকান্ডে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে ঝিনাইদহের সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন(৫৬), ঝিনাইদহ ৩ আসনের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য, (১৫ নং ) নবী নেওয়াজ, (৬ নং) শফিকুল আজম খান চঞ্চল সহ ১৯ জনকে আসামি করে ঝিনাইদহ আদালতে মামলা হয়েছে।রবিবার (১৫ই সেপ্টেম্বর) দুপুরে কোটচাঁদপুর আমলি আদালতে মামলাটি করেন নিহতের ছোট ভাই বি এম তারিকুজ্জামান। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার জামায়াতে ইসলামীর নেতা এনামুল হক উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন (২ নং) সহকারী পুলিশ সুপার কোটচাঁদপুর সার্কেল জাহিদুল ইসলাম, (৩ নং) এস আই মিজানুর রহমান, (৪ নং)এসআই সৈয়দ আলী, (৫ নং)কনস্টেবল সামির কুমার, (৭ নং) উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান খান, (৮ নং) বলাবাড়ীয়া গ্রামের মতিয়ার রহমান (৯ নং) চাঁদপাড়া গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে কাউসার আলী, (১০ নং)বলুহর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন, (১১ নং)বলুহর ইউনিয়ন এর বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম নজু, (১২ নং)কুশনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান, (১৩ নং) উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শরীফুন্নেছা মিকি,(১৪ নং) ছলেমান পুর গ্রামের মৃত ওসমান শেখের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল আরমান, (১৬ নং)কাগমারি গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে শফিকুর রহমান, (১৭ নং)পৌরসভার সিনেমা হল পাড়ার মৃত নুরুল হুদার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি শাহজাহান আলী, (১৮ নং) সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তাজুল ইসলাম, (১৯ নং) পাঁশপাতিলা গ্রামের আনসার আলীর ছেলে ইনামুল মেম্বার। বাদী বি এম তারিকুজ্জামান বলেন, আমার বড় ভাই শিক্ষক এনামুল হক কোটচাঁদপুর থানাধীন মুরুটিয়া বলরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর সহকারী শিক্ষক ছিলেন। এবং তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোটচাঁদপুর শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মী ছিলেন। বর্ণিত ছয় ও উনিশ নম্বর আসামি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শ্রেণীর নেতা ও দলীয় ক্যাডার। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোটচাঁদপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে নির্বাচনের মাঠ থেকে বিতাড়িত করা সহ জনগণকে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১৩ নম্বর আসামিকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে এজাহারে বর্ণিত ৬,৭,১৩,১৫ ও ১৭ নম্বর আসামির নেতৃত্বে এবং 8,9,10,11,12 ,14,16 ও 19 নম্বর আসামিগণের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে আমার ভাই শিক্ষক এনামুল হককে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। সেই ষড়যন্ত্রের সূত্র ধরে আমার ভাইকে গত ২৫-১-২০১৪ ইংরেজি তারিখে কোটচাঁদপুর উপজেলার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী জনাব মাওলানা তাজুল ইসলামের মনোনয়ন ফরম উপজেলা পরিষদে জমা দেওয়ার জন্য বেলা আনুমানিক দুইটার সময় উপজেলা গেটে পৌঁছালে এজাহারে বর্ণিত ৭-৮-৯,১১ ও ১৯ নম্বর আসামি গণ আমার ভাই শিক্ষক এনামুল হককে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের মনোনয়ন ফরম জমা দিতে সরাসরি নিষেধ করে এবং প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলে যে, যদি মনোনয়ন ফরম জমা দিস তাহলে তোকে এই উপজেলার গেটের সামনে প্রকাশ্যেই খুন করে ফেলবো। আমার ভাই এনামুল হক আসামিদের বাধা উপেক্ষা করিয়া উপজেলা পরিষদের মধ্যে ঢুকে যায় এবং মনোনয়ন ফরম জমা দিয়া বিকাল আনুমান ৩ঃ৩০ মিনিটে সময় উপজেলা গেটের সামনে আসা মাত্রই ৭,৮,৯,১১ও১৯ নম্বর  আসামিগণের উপস্থিতিতে এবং তাদের প্রকাশ্য মদদে এনামুল হককে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ২ নম্বর হইতে ৫ নম্বর আসামিগণ কোটচাঁদপুর থানার পুলিশ পিকআপে জোরপূর্বক আমার ভাইয়ের চোখ বেঁধে চার ও ছয় নম্বর সাক্ষীর সম্মুখে জোর করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপহরণ করে কোটচাঁদপুর থানায় নিয়ে যায়। অতঃপর দিনগত রাত আনুমানিক তিনটার সময় আমার ভাই শিক্ষক ইনামুল হককে কোটচাঁদপুর থানাধীন নওদা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের পিছনে নূর বক্সের জমিতে আনিয়া এক নম্বর ও দুই নম্বর আসামির নির্দেশে ৩ ও ৫ নম্বর আসামি আমার ভাই শিক্ষক এনামুল হককে গলাই ও বুকের বাম পাশে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে চলে যায় তারপর ২৬/ ১/ ২০১৪ ইংরেজি তারিখে ভোর আনুমানিক চারটা ৩০ ঘটিকা সময় নওদা গ্রামের সাক্ষী আবুল খায়ের পিতা গোলাম মোস্তফা ও বরকতউল্লাহ পিতা নবিরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে আমাকে বলে যে তোমার ভাই এনামুল হকের লাশ নওদা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের পিছনে গুলিবিদ্ধ মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন আমি সহ আমার পরিবারের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে যাইয়া আমার ভাইয়ের লাশ না পেয়ে কোটচাঁদপুর থানায় গিয়ে আমার ভাই শিক্ষক এনামুল হকের লাশ শনাক্ত করি উক্ত দিনেই কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ তড়িঘড়ি করে বেলা অনুমান ১১ টার সময় ময়না তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। লাশ ময়না তদন্তের পর আমরা নিজে গ্রহণ করে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি। কিন্তু পুলিশ কোন সময় বলে যৌথ বাহিনীর অভিযানে শিক্ষক এনামুল হক নিহত হয়েছে। আদালত বাদীর অভিযোগটি কোটচাঁদপুর থানাকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীর পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট রুস্তম আলী। মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে কথা হয় কোটচাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আল মামুন এর সাথে। তিনি জানান, আদালতের আদেশ এখনো থানাতে আসেননি। হাতে পেলে নির্দেশনা মোতাবেক মামলা রেকর্ড করা হবে এবং নির্দেশনা মোতাবেক যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sep 16, 2024 - 21:57
 0  6
কোটচাঁদপুরে জামায়াত নেতা এনামুল হত্যায় পুলিশ সুপার ও সাবেক দুই সংসদ সদস্য সহ ১৯ জনের নামে আদালতে মামলা,

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow