ঝিকরগাছায় দুই ছাত্রদল নেতা ওপর হামলা, কুখ্যাত সন্ত্রাসী রজব আলীর পক্ষের অবস্থান নিয়েছেন ওসি
যশোর প্রতিনিধি: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণ ইউনিয়নে চিহ্নিত অপরাধী ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী রজব বাহিনীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের সাপোর্ট পাওয়ায় সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঝিকরগাছা থানার ওসি তদন্ত ইব্রাহীম আলীর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠায় সে এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।এতে নাভারণ ইউনিয়নে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, নাভারণ ইউনিয়নের দুই ছাত্রদল নেতা খায়রুল আলম সোহাগ ও মনোয়ার হোসেন সাকিবের ওপর হামলার ঘটনায় ৪ জনের নাম উল্লেখ ঝিকরগাছা থানায় একটি মামলা করেন বাদী হারুন অর রশিদ হান্টু । মামলার ১ নম্বর আসামি রজব আলীকে রক্ষার জন্য সহযোগিতা করছে এই অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা। এখন মামলা নেওয়ার পর তা রেকর্ড করে তালবাহানা ও গড়িমসি করছেন ওসি তদন্ত ইব্রাহিম আলী। ছাত্রদল নেতা খায়রুল আলম সোহাগ মনোয়ার হোসেন সাকিব তারা উভয়ই ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা।বাকী আসামিরা হলেন জুয়েল হোসেন, মফিজুর রহমান ও মনিরুল ইসলাম। তারাও ইউনিয়নের একই গ্রামের বাসিন্দা। এবিষয়ে হারুন অর রশিদ হান্টু সাংবাদিকদের বলেন, রজব আলী একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী এবং দুইজন ছাত্রদল নেতার ওপর হামলার ঘটনায় সে ১ নম্বর আসামি। তাকে মামলা থেকে বাঁচাতে উঠেপড়ে লেগেছেন এবং তার পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিচ্ছেন ওসি। তিনি মুঠোফোনে হান্টুকে বলেন, রজব আলীর বিরুদ্ধে মামলা না করে স্থানীয়ভাবে এলাকায় বসে মিমাংসা করে ফেলেন। এসময় হান্টু ওসিকে বলেন রজব আলী নাভারণ ইউনিয়নে সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিনত করেছে। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নাভারণ ইউনিয়নে জনমনে আতংক বিরাজ করছে। এছাড়া সে এর আগে নিজ দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ প্রশাসনের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। হান্টু আক্ষেপ করে বলেন, ওসি থানার একজন প্রধান কর্মকর্তা হয়েও কিভাবে এতো বড় মাপের একজন অপরাধীর পক্ষে অবস্থান নিলেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে নিরাপত্তা চাইবে। আমি কোন মিমাংসা চাইনা। আমি রজব ও তার গংদের বিচার ও গ্রেপ্তার চাই। মামলা রেকর্ড না করলে আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করবো। তা না হলে মামলা রেকর্ড না করার কারণে ওসির বিরুদ্ধে আদালতে শরণাপন্ন হবো। হান্টু আরও বলেন,গত সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর মুঠোফোনে হান্টুর সঙ্গে ওসির কথা হলে তিনি বলেন মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। হান্টু তখন বলেন, তাহলে আসামিদের গ্রেপ্তার করেন। ওসি বলেন ,আমার সময়মতো আমি দেখবো। অবাক ব্যাপার, মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরের দিকে জানতে পারলাম ওসি মামলা রেকর্ড করেননি। বরংচো ওসি উল্টো চিহ্নিত অপরাধী ও মামলার আসামিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এমন অভিযোগ হান্টুর। ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহীম আলীর সঙ্গে মামলার বিষয় নিয়ে দুদিন আগেও মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন বাদী পক্ষকে (হান্টু) মামলা করার জন্য থানায় আসতে বলেছি।পরে বাদী পক্ষ থানায় যেয়ে একটি মামলা করেন। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরের দিকে ওসির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন থানায় কোন মামলা এন্ট্রি হয়নি। তিনি বলেন, সামান্য আঘাতে মামলা হবে না শুধু জিডি হবে। ছাত্রদল নেতা সোহাগের মাথায় রজব বাহিনীর হামলায় গভীর ক্ষত হয়েছে এবং ৫ টা সেলাই দিয়েছে ডাক্তার। অথচ ওসি ইব্রাহীম আলী বলছেন সামান্য আঘাত মামলা নেওয়া যাবে না। উল্লেখ্য- গত ৫ আগস্টের পরে উপজেলার হাড়িয়া নিমতলা বাজারে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের গুদাম থেকে ৩০০ বস্তা চাল লুটের ঘটনায় ওসি নিরব ভূমিকা পালন করেন।এরপর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর ওসি নড়েচড়ে বসেন। এরপর খায়রুজ্জামান মিনু ও রজব আলীসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ঝিকরগাছা থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলার একদিন পর জানা যায় এজাহার থেকে ১ নম্বর আসামি খায়রুজ্জামান মিনুর নাম বাদ দেন ওসি। চাল লুটের মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করে ওসি সময়ক্ষেপণ করেন এবং রজব আলীসহ বাকী আসামিদের আদালত থেকে জামিনের সুযোগ করে দেন। সেই মামলায় সন্ত্রাসী রজব এখন জামিনে আছেন। জামিনে থাকা অবস্থায় উপজেলার নাভারণ ইউনিয়নের পুরাতন বাজারে গত বুধবার (২ অক্টোবর) রাত ৮ টার দিকে দেশীয় অস্ত্র ও লোহা পাইপ নিয়ে ছাত্রদল নেতা খায়রুল আলম সোহাগ ও মনোয়ার হোসেন সাকিবের ওপর আচমকা হামলা করেন রজব আলী, তার ছেলে জুয়েল হোসেন, মফিজুর রহমান ও মনিরুলসহ আরও ৫/৭ জন। এসময় সোহাগের মাথায় লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং সাকিবকে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সোহাগের মাথায় পাঁচটি সেলাই দিয়েছে কর্তব্যরত ডাক্তার। এ ঘটনায় বুধবার রাতেই ঝিকরগাছা থানা একটি অভিযোগ দায়ের করেন সাকিবের বাবা বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ হান্টু। অভিযোগ দায়ের পুলিশ কোন তদ্ন্তও করেননি এমনকি বাদী পক্ষের কারো সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। এরপর হান্টু বিষয়টি গণমাধ্যকর্মীদের অবহিত করেন।
আপনার অনুভূতি কী?