সীমান্তের ৩০টি পয়েন্টে দিয়ে ঢুকছে রোহিঙ্গা,উত্তপ্ত রাখাইন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলছে সংঘাত। সেই সংঘাতের আতঙ্ক এবার ছড়িয়ে পড়েছে টেকনাফ সীমান্তে। কিছু দিন মর্টারশেল ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ না থাকলেও আবার গতকাল রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসে এপারে। সাবরাং ইউনিয়নের পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, গতকাল রোববার রাত দেড়টার দিকে মংডু শহরে নিজেদের দুটি চৌকির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে আরাকান আর্মির সদস্যদের লক্ষ্য করে মর্টার শেল ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিজিপি ও জান্তা বাহিনী। এতে সীমান্তের ওপার থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। এসব শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা টেকনাফ। একই কথা বলেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ কবির আহমদ। তিনি জানান, মর্টার শেল ও গ্রেনেডের বিস্ফোরণে বাড়িঘর কেঁপে ওঠায় রাতভর আতঙ্কের মধ্যে ছিল সীমান্ত এলাকার মানুষ।অপর দিকে রাখাইন রাজ্যে থেকে সীমান্ত রক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। রাখাইন এলাকা থেকে বিতাড়িত এসব শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার। দালালদের মতে প্রতিদিন এই সংখ্যা হাজারের ওপরে। সে হিসেবে আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার থেকে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দালালদের সহযোগিতায় গোপনে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চলমান সংঘাতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা এখনো থামেনি। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ২০-৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে গোপনে অনুপ্রবেশের করেই যাচ্ছে এসব দালালচক্র। এদিকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা সময় আটক করে রোহিঙ্গাদের দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের শতাধিক নৌকাকে আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বিজিবি। সীমান্ত বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নজরদারি কম এমন পয়েন্ট দিয়ে রাতের আঁধারে দালালরা রোহিঙ্গাদের এ দেশে আনছেন। বিনিময়ে নিচ্ছেন জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। তাই সীমান্তে বিজিবির কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানান, প্রাণের ভয়ে তারা গ্রাম ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ওপারে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় তাদের মতো আরও অনেকে এ পারে চলে আসার পথ খুঁজছে। মংডুর নলবইন্য ও মেরোল্য এলাকায় তান্ডব চালাচ্ছে আরকান আর্মি। ২০০টি ঘরে আগুন দিয়েছে তারা। এ সময় তাদের গুলিতে ২০ জন রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হয়েছে। অনেকে মারাও গেছে। প্রাণে বাঁচতে তারা নাফ নদ পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জান্তা বাহিনী এসব এলাকায় আগে তান্ডব করেনি। এখন মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি বেশি নির্যাতন করছে আরকান আর্মি। তাদের দলে যোগ না দিলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের। নইলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তের ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে দালালদের সহায়তায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্ট গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে। এমনটা বলেছেন টেকনাফ পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. ইসমাইল। তিনি জানান, অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ক্যাম্পে প্রবেশ করলেও অনেকেই টেকনাফ পৌরসভা এবং সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে আছেন। বাংলাদেশে ঢোকার জন্য রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন পয়েন্টে লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারের মিয়ানমারের প্যারাংপুরু নামের এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, গত দুই তিন দিনের মধ্যে এখন পর্যন্ত দেশে কমপক্ষে ৩০ হাজারের ও বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ হয়েছে। জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল, উখিয়ার বালুখালী, ঘুমধুম সীমান্তসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করেছে। টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, কিছু জেলে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে সহোযোগিতা করছে। প্রতিদিন অনেক রোহিঙ্গা বিনা বাঁধায় প্রবেশ করছে নাফনদীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। টেকনাফে তাদের আত্মীয় স্বজনের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে আমার এলাকায় আশেপাশে বাড়া বাসায় রোহিঙ্গারা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। টেকনাফের নয়াপাড়ার ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আয়াছ বলেন ক্যাম্পে গত এক সপ্তাহে নতুন করে আসা অন্তত ৩০০ এর বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সাব্বির জানান, মিয়ানমারের জান্তা ও আরাকান আর্মির লড়াইয়ে তার বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পর স্ত্রী ও সন্তানদের খবর জানেন না। তিনি মংডুর কাছাকাছি আসলে আরাকান আর্মির সদস্যরা তাকে আটকে রাখে। তাদের ক্যাম্পে নির্যাতন করে নানা বিষয় জিজ্ঞাসা করা হয়। ওই ক্যাম্পে তিনি টানা ৩ মাস ছিলেন। তাকে ছেড়ে দেওয়ার পর ১০-১২ দিনের চেষ্টায় ক্যাম্পের এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় টেকনাফের এক দালালের সঙ্গে আলাপ করেন। ওই দালালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্যারাংপুরু এলাকায় নাফ নদীর প্যারাবনে অবস্থান নেন। নৌকা নিয়ে দালালরা যাওয়ার পর মিয়ানমারের ৫ লাখ কিয়ান নগদ দিলে তাকে নৌকায় তুলে এপারে নিয়ে আসেন। এরপর লুকিয়ে ক্যাম্পে পৌঁছেন তিনি। সাব্বির আহমেদ আরও জানান, তার ৭ ছেলে-মেয়ে জীবিত থাকলেও স্ত্রী বোমার আঘাতে মারা গেছেন বলে শুনেছেন। ওখানে দুই পক্ষের সংঘাতে অনেকেই হতাহত হচ্ছে। রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে এদিক-ওদিক পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বেশিরভাগই বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় জড়ো হয়েছে। তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চায়। একই ক্যাম্পে আলাপ হয় মংডু

Sep 9, 2024 - 20:43
 0  5
সীমান্তের ৩০টি পয়েন্টে দিয়ে ঢুকছে রোহিঙ্গা,উত্তপ্ত রাখাইন

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow