খুলনার ইটভাটার ৬৬ শতাংশেরই নেই পরিবেশ ছাড়পত্র মালিকানায়- প্রভাবশালী আ.লীগ নেতারা

খুলনা বিভাগে মোট ইটভাটার ৬৬ শতাংশই অবৈধ। এদের অনেকের ইটভাটা হিসেবে নিবন্ধন থাকলেও নেই পরিবেশ ছাড়পত্র। এসব ইটভাটার মালিকানায় রয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ প্রভাবশালী নেতারা। জনবসতিপূর্ণ এলাকা, স্কুলের পাশে, বাজার এলাকায় এসব অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ করা এসব প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রায় সবাই এখন আত্মগোপনে। ফলে এসব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছ্বেদ করে পরিবেশ রক্ষার এখনই উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের দশ জেলায় ১ হাজার ১৯৩টি ইটভাটার মধ্যে ৭৮৫টি ইটভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নেই। এসব ইট ভাটা গড়ে উঠেছে লোকালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি। কাঠ পুড়িয়ে এবং কালো ধোঁয়ার মাধ্যমে দূষণ ঘটাচ্ছে পরিবেশের। দীর্ঘদিন ধরে এসব ইটভাটায় ইট তৈরি ও বিক্রি করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনে বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকা ও কৃষিজমি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান ও জলাভূমি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন দণ্ডনীয় অপরাধ। খুলনার রূপসা উপজেলার আলাইপুরে ইবিএম ব্রিকস নামের ইট ভাটাটি আলাইপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে মাত্র ৪শ মিটার দূরে। বারবার পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিলেও অভিযান পরিচালনা করলেও কর্ণপাত করেনি ভাটার মালিক।খুলনা জেলার নয়টি উপজেলায় প্রশাসন থেকে নিবন্ধন পাওয়া ইটভাটার সংখ্যা ১৫৩টি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৯৭টিকে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন আছে তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই এমন ভাটাও অবৈধ। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, বাগান, জলাভূমি, কৃষিজমি, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ভাটা স্থাপনের অনুমতি নেই। ছাড়পত্রহীন সবচেয়ে বেশি ভাটা ডুমুরিয়া উপজেলায় ২১টি। এ ছাড়া ফুলতলায় ১৩, পাইকগাছায় ১২, রূপসায় ৫, কয়রায় ৩, দাকোপ ও দীঘলিয়ায় ১টি করে। ভাটার মালিকদের মধ্যে আছেন সংসদ সদস্য (এমপি) ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও। অন্যদিকে নদীর জায়গা, কৃষিজমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে হওয়ায় ডুমুরিয়ার ২১টি ভাটাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫০০ মিটারের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে এবিএম নামের ভাটা। পাইকগাছায় কৃষিজমির মধ্যে এআরবি ব্রিকস, যমুনা ব্রিকস, এসকেবি ব্রিকসে ইট পোড়ানো হচ্ছে। খুলনা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আওয়ামী লীগ সরকারের সদ্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী। ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া নদী দখল করে অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ করে অবলিলায় পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি। তার মালিকানাধীন কেপি ব্রিকসের কালো ধোঁয়া খর্নিয়ার বাজার ও বৃহৎ গরুর হাট এলাকায় ছেয়ে গেলেও এলাকার মানুষ ভয়ে এতদিন চুপ ছিলেন। ডুমুরিয়ার আতলিয়া ইউনিয়নে খর্নিয়া এলাকায় হরি নদীর তীরে সেতু ব্রিকস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নামে ভাটা গড়ে তুলেছেন উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কখনো মুখ খুলতে সাহস পাননি। পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, আইন অনুযায়ী তিন বছর পরপর জেলা প্রশাসন থেকে ইটভাটার নিবন্ধন নবায়ন করতে হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। যেগুলোকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না, তাদের এক বছরের মধ্যে ভাটা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়। এর বাইরে যেসব ভাটা ছাড়পত্র ছাড়া চলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে নতুন কোনো ইটভাটার ছাড়পত্র আমি দিইনি। তিনি বলেন, পরিবেশ উপদেষ্টা যে নির্দেশনা দিয়েছেন সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচলানা করা হবে। আমার বদলি হয়েছে। আগামী সপ্তাহে হয়তো চলে যাব। যিনি আসবেন তিনি অবশ্যই এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখবেন।

আগস্ট 25, 2024 - 20:15
 0  11
খুলনার ইটভাটার ৬৬ শতাংশেরই নেই পরিবেশ ছাড়পত্র মালিকানায়- প্রভাবশালী আ.লীগ নেতারা

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow