যৌথবাহিনীর অভিযানে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা

মোঃ ইসমাইল হোসেন।। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জামিনে মুক্তি পাওয়া আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এবার দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন মহলে তদবির করছে। কেউ আবার অসাধু চক্রকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করারও চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে পুরস্কারঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজেদুল ইসলাম ইমন ও কিলার আব্বাস মাসখানেক আগে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ইমন এখন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। সেও একটি প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে দেশ ছেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তা ছাড়া কিলার আব্বাসও দুবাই অবস্থান করছে। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায় ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে খ্যাত সাজেদুল ইসলাম ইমন, ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, আব্বাস আলী ওরফে কিলার আব্বাস, সুইডেন আসলাম, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন, খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু, ফ্রিডম সোহেল ও হাবিবুর রহমান তাজসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী। হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরও কেউ কেউ দেশে ফিরে আসছে। এই তালিকায় আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম রসুল ওরফে টোকাই সাগর। মাসখানেক আগে সে আমেরিকা থেকে ঢাকায় আসে। কারামুক্তির পর ওইসব সন্ত্রাসী ফের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এলাকার আধিপত্য নিতে একাধিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। চলমান ডেভিল হান্ট অপারেশনে সন্ত্রাসীদের বাসাবাড়ি বা আস্তানায় হানা দিলেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ধরতে পুরস্কারের ঘোষণাও আসতে পারে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। এদিকে সন্ত্রাসীরা যখন দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে, ওই সময় আরেকটি তথ্য বেরিয়েছে, পুরস্কারঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী গোলাম রসুল ওরফে টোকাই সাগর আমেরিকা থেকে দেশে এসেছে। বিমানবন্দরে কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই সে আসতে পেরেছে। এখন সে বিমানবন্দর, গুলশান ও বনানী এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। আরেক সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন বছর দু-এক ধরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ‘আয়নাঘরে’ বন্দি ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সুব্রত বাইন আয়নাঘর থেকে ছাড়া পায়। তার বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উঠেছে। রমনা, মগবাজার, কাকরাইলসহ আরও কয়েকটি এলাকায় একক আধিপত্য চালানোর চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েক মাস ধরেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা দফায় দফায় বৈঠক করে চলেছেন। খুন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধও বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারামুক্ত হওয়ার পর থেকেই অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। প্রকাশ্যে তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডকে রুখতে পুলিশ নানা কৌশল নিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে। ইতিমধ্যেই যারা জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে এসেছে, তাদের তালিকা করা হয়েছে। পাশাপাশি সহযোগীদেরও তালিকা করেছে পুলিশ। তালিকাটি সারা দেশের পুলিশের ইউনিটগুলোয় পাঠানো হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সুইডেন আসলাম, যোশেফ, বিকাশ ও প্রকাশকে ধরতে ৫০ হাজার টাকা করে প্রথম পুরস্কার ঘোষণা করে সরকার। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার খুনোখুনি ও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বেড়ে গেলে ঢাকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে। কিন্তু কখনো শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়নি। ২০০৮ সালে তাকেসহ ঢাকার আট সন্ত্রাসীকে ভারত থেকে ফেরত আনে পুলিশ। সে থেকেই কারাগারে ছিল ইমন। কারাগারে বসেই সে খুনোখুনি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৩৩টি মামলা রয়েছে। সীমান্তে সতর্কবার্তা পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশের কড়াকড়ি করায় কারামুক্ত সন্ত্রাসীরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। নানাভাবে তারা তদবির করছে। মোহাম্মদপুরের পিচ্চি হেলাল মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে সে ‘ভিসা’ পাওয়ার চেষ্টা করছে। সুইডেন আসলামও একইভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। রাশু ও ফ্রিডম সোহেল দুবাই যেতে নানা প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কারামুক্ত সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি অন্য অপরাধীদের বিষয়ে পুলিশ হার্ডলাইনে গিয়েছে। এসব টের পেয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। আমরা নিশ্চিত হয়ে বিমানবন্দরসহ দেশের সব কটি সীমান্ত এলাকায় তাদের বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছি। কারামুক্ত অন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা এবং অপরাধ পরিস্থিতিকে বেসামাল করে তুলছে। এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশ অপরাধে যুক্ত সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর দেশত্যাগ চাঁদার দাবিতে এলিফ্যান্ট রোডের ব্যবসায়ী এহতেশামুল হকের ওপর হামলার তিন দিন আগেই সানজিদুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় পালিয়ে গেছে। ছদ্মনাম, ঠিকানায় পাসপোর্ট করে দেশ ছেড়েছে সে। ওই দেশে ইমনের স্ত্রী খন্দকার শাহনাজ পারভীন লিনা বসবাস করে। লিনা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী টিটনের ছোট বোন। মালয়েশিয়া থেকেই তার গ্রুপের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করছে। কিলার আব্বাসও দুবাই পালিয়ে গেছে। সেও ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে। পুলিশের গোপন প্রতিবেদন পুলিশ সূত্র জানায়, সন্ত্রাসীদের তৎপরতা নিয়ে পুলিশের কয়েকটি ইউনিট প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠিয়েছে। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপনে আছে। টিপু হত্যাকাণ্ডের পর সে আলোচনায় এসেছিল। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে আছে। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ বিদেশ থেকে সক্রিয় আছে। তাদের সঙ্গে মোহাম্মদপুর এলা

ফেব্রুয়ারি 16, 2025 - 08:45
 0  2
যৌথবাহিনীর অভিযানে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow