হাঙ্গরের আক্রমণে পা হারানো সাঁতারুর রৌপ্য পদক জয়
প্রতিবন্ধকতা থেকে ফিরে আসার অনেক গল্পই পাওয়া যাবে ক্রীড়াঙ্গনে। তবে হিংস্র হাঙ্গরের কামড়ে পা হারানোর পরেও ক্রীড়াঙ্গনে ফেরত আসার উদহারণ পাওয়া দুস্কর হবে। এমনটাই করে দেখিয়েছেন মার্কিন সাঁতারু আলি ট্রুইট। হাঙ্গরের আক্রমণে পা হারানোর মাত্র ১৬ মাস পরই আলি ট্রুইট তার সাঁতারের ক্যারিয়ারে ফিরে এসে চলমান প্যারিস প্যারালিম্পিকে রৌপ্য পদক জিতেছেন। এই চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তনের শীর্ষ বিন্দু ছিল বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে, যখন ট্রুইট মহিলাদের এস১০ ৪০০-মিটার ফ্রিস্টাইলে রৌপ্য পদক অর্জন করেন এবং নতুন এক আমেরিকান রেকর্ড স্থাপন করেন, তার সময় ছিল ৪:৩১.৩৯।সাঁতার শেষে ট্রুইট বলেন, ‘এটি আমার জীবনের এক বিশেষ মুহূর্ত। আমি ভাগ্যবান যে এমন একটি শক্তিশালী সমর্থনশক্তি পেয়েছি আমার চারপাশে। যখন আপনি মৃত্যুর মুখোমুখি হন এবং জীবনের দ্বিতীয় সুযোগের মূল্য উপলব্ধি করেন, তখন আপনি সেটির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাবেন।’২০২৩ সালের মে মাসে, তুর্কস ও কাইকোসের উপকূলে আটলান্টিক মহাসাগরে সাঁতার কাটার সময় হাঙ্গর আক্রমণের শিকার হন তিনি। নিজের জীবন বাঁচাতে হাঙ্গরের সাথে লড়াই করে ৭০ মিটার সাঁতরে একটি নৌকায় পৌঁছাতে সক্ষম হন তিনি, যেখান থেকে তাকে দ্রুত এয়ারলিফ্ট করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।‘আমি মনে করি সেটি ছিল আমার বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি। এটি ছিল একটি ভয়ঙ্কর দিন, একটি ভয়াবহ স্মৃতি। কিন্তু আমি বেঁচে আছি, আমি এখানে আছি এবং আমি জীবনের এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে চাই,’ ট্রুইট স্মৃতিচারণ করে বলেন। চিকিৎসকরা তাঁর জীবন বাঁচাতে তিনটি বড়ো অপারেশন করেন এবং শেষমেষ তার বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে বাধ্য হন। যদিও তিনি জলে থাকা নিয়ে একধরনের ভীতির মধ্যে পড়েন। তবে ট্রুইট তার পুরনো কোচ জেমস ব্যারোনের সাথে পুনরায় যুক্ত হন সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে এবং এর ঠিক এক মাস পরই প্রথম প্যারাস্পোর্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ট্রুইট বলেন, ‘প্রত্যেক দিনই আমি নতুন কিছু শিখি যা সেই আক্রমণের স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনে। আমি ভেবেছিলাম আমার ভয় কাটিয়ে উঠতে পারব, কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি যে এই যাত্রাটি সহজ নয়। তবে আমি এখন অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্যে আছি এবং জলে থাকা নিয়ে অনেকটা ভাল অনুভব করছি।’ প্যারিসে প্যারালিম্পিকের লা ডিফেন্স এরিনায় ট্রুইটের সেই কঠিন দিনে সাথে থাকা দুই বন্ধু, সোফি এবং হান্নাও উপস্থিত ছিলেন। সোফি তার পায়ে টুর্নিকিট বেঁধে তার জীবন রক্ষা করেছিলেন এবং হান্না ছিলেন সেই চিকিৎসক, যিনি তাকে হাসপাতালে প্রথম চিকিত্সা দেন। ট্রুইট কৃতজ্ঞতার সাথে তাদের এবং তার পরিবারের প্রশংসা করেন, ‘আমার বাবা-মা অসাধারণভাবে আমাদের বড় করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ যে এমন একটি পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব পেয়েছি যারা আমার এই যাত্রায় পাশে ছিল।’ এই অবিশ্বাস্য যাত্রার শেষে ট্রুইট দেখিয়ে দিলেন যে জীবনের চরম বিপর্যয়কেও সাহস, ধৈর্য এবং ভালোবাসার মাধ্যমে জয় করা সম্ভব।
আপনার অনুভূতি কী?