হৃদয়ে সালমান শাহ
নায়ক সালমান শাহ। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয় জয় করতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র অল্প কয়েকটি বছর। এ সময়েই দর্শকদের স্বপ্নের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। উপহার দিয়েছিলেন একের পর এক কালজয়ী সিনেমা। কিন্তু মাত্র ২৪ বছর বয়সে ১৯৯৬ সালে দর্শকদের বুকের ভেতর আগুন জ্বালিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর ২৮ বছর পরও তার জনপ্রিয়তায় কোনো ভাটা পড়েনি। তিনি দর্শকদের হৃদয়ে এখনো বেঁচে আছেন স্বপ্নের নায়ক হয়ে। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম স্মরণীয় নায়ক সালমান শাহ। অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে তিনি নিজের প্রতিভার এতখানি বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন যে, তার মৃত্যুর ২৮ বছর পরও ভক্তদের মনে সমান উন্মাদনা কাজ করে। তাই তো তার সিনেমাগুলো এখনো দর্শকপ্রিয়তা হারায়নি। সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এখনো প্রচারিত হচ্ছে টেলিভিশন ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে। সালমান শাহর সিনেমা : সালমান শাহ তার ক্যারিয়ারে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে সিংহভাগ সিনেমাই ব্যবসায়িকভাবে সফল। এ সিনেমাগুলোর নাম ও মুক্তির তারিখ দর্শকদের জন্য তুলে ধরা হলো-কেয়ামত থেকে কেয়ামত (২৫ মার্চ, ১৯৯৩), তুমি আমার (২২ মে, ১৯৯৪), অন্তরে অন্তরে (১০ জুন, ১৯৯৪), সুজন সখী (১২ আগস্ট, ১৯৯৪), বিক্ষোভ (৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪), স্নেহ (১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪), প্রেমযুদ্ধ (২৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৫), কন্যাদান (৩ মার্চ, ১৯৯৫), দেনমোহর (৩ মার্চ, ১৯৯৫), স্বপ্নের ঠিকানা (১১ মে, ১৯৯৫), আঞ্জুমান (১৮ আগস্ট, ১৯৯৫), মহামিলন (২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫), আশা ভালোবাসা (১ ডিসেম্বর, ১৯৯৫), বিচার হবে (২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬), এই ঘর এই সংসার (৫ এপ্রিল, ১৯৯৬), প্রিয়জন (১৪ জুন, ১৯৯৬) তোমাকে চাই (২১ জুন, ১৯৯৬), স্বপ্নের পৃথিবী (১২ জুলাই, ১৯৯৬), সত্যের মৃত্যু নেই (৪ অক্টোবর, ১৯৯৬), জীবন সংসার (১৮ অক্টোবর, ১৯৯৬), মায়ের অধিকার (৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৬), চাওয়া থেকে পাওয়া (২০ ডিসেম্বর, ১৯৯৬), প্রেম পিয়াসী (১৮ এপ্রিল, ১৯৯৭), স্বপ্নের নায়ক (৪ জুলাই, ১৯৯৭), শুধু তুমি (১৮ জুলাই, ১৯৯৭), আনন্দ অশ্রু (১ আগস্ট, ১৯৯৭) ও বুকের ভেতর আগুন (৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭)। সালমান শাহর নায়িকারা : বড় পর্দায় অভিনয়ে সালমানকে একজন প্রেমিক, কলেজছাত্র, কখনো পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গেছে। কখনো মনে হয়নি তিনি অতি অভিনয় করছেন। সব চরিত্রকেই নিজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারতেন তিনি। তার বিপরীতে জুটি বেঁধে অভিনয় করে সে সময় অনেকেই হয়েছেন জনপ্রিয়। সালমান শাহর সেসব নায়িকার তালিকা নিচে দেওয়া হলো—সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে সর্বাধিক ১৪টি সিনেমার নায়িকা হিসেবে ছিলেন শাবনূর। এরপর চারটি সিনেমায় তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন মৌসুমী ও তিনটি ছবিতে শাবনাজ। এ ছাড়া তার নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে লিমা, শিল্পী, সোনিয়া, বৃষ্টি, কাঞ্চি, শ্যামা, সাবরিনা, শাহনাজকে। চলচ্চিত্র জীবনে ১১ জন নায়িকার নায়ক ছিলেন সালমান শাহ। এ ছাড়া নাটকে সালমানের সঙ্গে ছোট পর্দায় জুটি বাঁধেন বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী তমালিকা কর্মকার। অন্যদিকে নাটকে সালমান শাহ সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন শমী কায়সারের সঙ্গে। আরেক নায়িকা তানভীন সুইটির সঙ্গেও জুটি বাঁধেন তিনি। ইমন থেকে সালমান শাহ : সালমান শাহর পারিবারিক নাম ছিল ইমন। কিন্তু পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে সালমানের প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এ চুক্তিবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে তার নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়। এ সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন মৌসুমী। যুগের পর যুগ দর্শকের হৃদয়ে সালমান : সালমান শাহ চলে গেছেন দুই যুগের বেশি সময় হয়ে গেছে। সে সময় থেকেই তাকে অনুকরণ করার চেষ্টা ছিল অনেকের মধ্যেই, যা এখনো চলমান। এ নায়ককে নিয়ে ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা পোড়ামন ২-তে বর্তমান প্রজন্মের নায়ক সিয়াম আহমেদ একটি গান উপহার দিয়েছিলেন দর্শকদের। গানের শিরোনাম ছিল নাম্বার ওয়ান হিরো। এ ছাড়া সালমান শাহর সাবলীল অভিনয়ের দক্ষতার জন্য আজও বাংলা সিনেমার বর্তমান প্রজন্মের নায়করা তাকে তাদের আইডল মানতে দ্বিধা করেন না। এক কথায় বললে, তার মতো কেউ ছিলেন না, কেউ নেই আর কেউ আসবেনও না। সালমান শাহ বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে দর্শকদের অন্তরে।
আপনার অনুভূতি কী?