৩ বছরের আগে শিশুকে চিনি দেবেন না: মার্কিন গবেষণা
নিজের অজান্তেই আপনার শিশুর ক্ষতি করে ফেলছেন না তো? বয়স ৩ বছর হওয়ার আগেই, বিভিন্ন কোম্পানির চকলেট, কেক, মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় লোভনীয় সব খাবার, শিশুর মুখে তুলে দিচ্ছেন? যদি তা করে থাকেন, তাহলে আজই বন্ধ করে দিন। কারণ, এতে বেশ কিছু জটিল ও দীর্ঘ মেয়াদি শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। ৬০ হাজার মানুষের ওপর দীর্ঘ ৭০ বছর গবেষণার পর, চাঞ্চল্যকর এই তথ্য জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক। সম্প্রতি গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত সায়েন্স জার্নালে। তিন বছরের আগে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার শিশুর কী কী ক্ষতি করে তা এই গবেষণায় তুলে ধরেছেন মার্কিন গবেষকরা। গবেষকরা বলছেন, শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যতা কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ধারিত হয় জীবনের প্রথম তিন বছরে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম এক হাজার দিন বা তিন বছর যদি শিশুকে চিনিমুক্ত রাখা যায়, তাহলে তা ভবিষ্যতে বেশ কিছু জটিল রোগের ঝুঁকি কমায়। বিবিসি জানিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পর যুক্তরাজ্যে সরকারিভাবে রেশন দেওয়া বন্ধ করা হয়। ১৯৫৩ সালের সেপ্টেম্বরে চিনি ও মিষ্টান্ন রেশন হিসেবে দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর পরের মাস থেকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরা প্রতিদিন গড়ে ৪১ থেকে ৮০ গ্রাম পর্যন্ত চিনি খাওয়া কমিয়ে দেন। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে জন্মেছেন—এ রকম ৬০ হাজার মানুষের ওপর ৭০ বছর ধরে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। তাদের মধ্যে একদল জন্মের প্রথম এক হাজার দিন চিনি খেয়েছিলেন। অন্য দলের সদস্যরা খাননি। এই দুই দলের সদস্যদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ৭০ বছর ধরে তাদের স্বাস্থ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। মূল পার্থক্য গড়ে দেয় জন্মের পর একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুর চিনি খাওয়া না–খাওয়ার বিষয়টি। গবেষণায় দেখা গেছে, রেশন বন্ধ হওয়ার পর যেসব শিশু জন্মেছে, তারা পরবর্তী সময়ে ৩৫ শতাংশেরও কম টাইপ–২ ডায়াবেটিস ও ২০ শতাংশেরও কম উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছে। এই গবেষণা দলের সদস্য তাদেজা গ্রেসনার বলেন, ‘কেবল যে ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমেছে, তাই-ই নয়, চিনি না খাওয়া শিশুদের পরবর্তী সময়ে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও কম ছিল। কেননা, তাদের মেটাবলিক রেট ভালো ছিল।’ ওই গবেষক আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়েরা জেনে বা না জেনে শিশুদের মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। অথচ মিষ্টি বাদ দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ছোট একটি অভ্যাসই পরে স্বাস্থ্যকর জীবনের রূপরেখা গড়ে দেয়।’ যুক্তরাজ্যের লন্ডনের কিংস কলেজের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ডা. কেটি ডালরিম্পল জানান, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণা। নতুন বাবা–মায়েদের বিষয়টি জানা অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে শিশুদের লক্ষ্য করে যেসব কোম্পানি চকলেট, কেক, মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় লোভনীয় খাবার তৈরি করে, তাদেরও অবিলম্বে সচেতন করতে হবে।
আপনার অনুভূতি কী?