গ্রেপ্তার ডা. দীপু মনি
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, চাঁদপুরের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করেছে।দীপু মনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন এ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ২০০৮ সালে চাঁদপুর-৩ আসন থেকে টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন তিনি। দীপু মনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ডা. দীপু মনির জন্ম ১৯৬৫ সালের ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা গ্রামে। তার বাবা এম এ ওয়াদুদ একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা আন্দোলন কর্মী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মা রহিমা ওয়াদুদ ছিলেন শিক্ষিকা। তাদের দুই ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপুও চিকিৎসক।বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তৌফিক নাওয়াজ দীপু মনির স্বামী। তিনি আন্তর্জাতিক একটি ল’ফার্মের প্রধান। উপমহাদেশের দুই হাজার বছরের ঐতিহ্য মণ্ডিত ধ্রুপদী সংগীতের উৎস হিসেবে পরিচিত ‘আলাপ’-এর একজন শিল্পী তিনি। তাদের দুই সন্তান রয়েছেন। তাদের নাম—তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও তানি দীপাবলী নাওয়াজ। হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ডা. দীপু মনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) থেকে এমবিবিএস ও বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পড়েন তিনি। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে এমপিএইচ করেন। এ ছাড়া লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমঝোতা ও দ্বন্দ্ব নিরসনের ওপর কোর্স করেন তিনি। কর্মজীবন দীপু মনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। রাজনৈতিক জীবন দীপু মনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। ওই সময় কমনওয়েলথ মিনিস্টারিয়াল অ্যাকশন গ্রুপের প্রথম নারী এবং দক্ষিণ এশীয় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি। এমনকি তার নেতৃত্বে সমুদ্র জয় করে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে পুনরায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন ডা. দীপু মনি। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য বাংলাদেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী। বর্তমানে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসনও তিনি। বিদেশ সফর ও সমালোচনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দীপু মনি তার ঘনঘন বিদেশ সফরের কারণে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সমালোচিত হয়েছেন। কিছু সংবাদের প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি সাড়ে চার বছরে ১৮৭ বার বিদেশ সফর এবং ৬০০ দিন বিদেশ অবস্থান করেছেন। জবাবে, তিনি বলেছিলেন—তিনি প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে বিদেশে গেছেন, যিনি প্রতিটি সফরের ভালো-মন্দ বিবেচনা করে তাকে অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ৩৬টিসহ ১১৪টি বিদেশি সফর করেছেন এবং দাবি করেছেন, তার দ্বিপক্ষীয় সফরের সংখ্যা ১৭টি নয়—৬২টি ছিল। দুর্নীতির অভিযোগ চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে দীপু মনির পরিবারের সদস্যদের প্রস্তাবিত জমির দাম কয়েকগুণ বেশি দেখিয়ে ৩৫৯ কোটি টাকা বাড়তি আদায়ে ‘কারসাজির’ অভিযোগে তিনি সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হন। তবে ডা. দীপু মনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আপনার অনুভূতি কী?