জেলা কারাগার ডান্ডাবেরীর বাণিজ্য চরমে চুরির অপবাদে ৬ হাজতির ওপর বর্বর নির্যাতন:

কক্সবাজার প্রতিনিধি- ক্যান্টিনের হিসাব গরমিল দেখিয়ে ৭ কয়েদী-হাজতি কে ডান্ডাবেরী দিয়ে সেল খানায় আটক কারাগারে হাসপাতাল এখন ‘ভিআইপি ইয়াবা কারবারিদের বিশ্রামাগার জেলার আবু মুছার হাতে বন্দি কক্সবাজার জেলা কারাগার, বন্দিদের জীবন দুর্বিষহ! কক্সবাজার জেলা কারাগার এখন সংশোধনাগার নয়, বরং দুর্নীতি আর নির্যাতনের কারাগার! জেলার আবু মুছার নেতৃত্বে এখানে টাকাই ন্যায়বিচার নির্ধারণ করে। ভালো সিট, মানসম্মত খাবার, এমনকি স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ—সবই কিনতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে। আর যার টাকা নেই? তার জন্য অপেক্ষা ভয়াবহ নির্যাতন, ডান্ডাবেরীর শেকল, কিংবা ‘বুট-ছোলা চোর’ অপবাদ! কারা হাসপাতালও আর চিকিৎসার জায়গা নয়, বরং প্রভাবশালী ইয়াবা কারবারিদের বিলাসবহুল বিশ্রামাগার। অসুস্থ বন্দিরা ন্যূনতম চিকিৎসার আশায় ছটফট করলেও, তাদের কপালে জোটে অবহেলা আর অবর্ণনীয় কষ্ট।আইনের শাসন এখানে কেবলই এক অলীক কল্পনা, বাস্তবে চলছে নিষ্ঠুর বাণিজ্য। অসহায় বন্দিরা টাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে, আর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার! কারাগারের এই অন্ধকার গলিপথে মানবাধিকারের আলো কি কখনো পৌঁছাবে? এমন প্রশ্ন বন্দিদের।সম্প্রতি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই কারাগারের ভয়ংকর এক বাস্তবতা। চুরির অপবাদে ৬ হাজতির ওপর বর্বর নির্যাতন: গত ৩ মার্চ, কারাগারের ভেতরে নির্মম এক ঘটনার জন্ম দেয় জেলার আবু মুছা। বুট ও ছোলা চুরির অপবাদ দিয়ে ছয়জন হাজতিকে ক্যাশ টেবিলে ডেকে নিয়ে বেদড়ক মারধর করেন তিনি। সদ্য মুক্তি পাওয়া হাজতি শাহারিয়ার (হাজতি নম্বর ৫৯৭৯) জানান, অভিযুক্তরা সম্পূর্ণ নির্দোষ হলেও তাদের নির্মমভাবে প্রহার করা হয়। মারধরের শিকার আসামিরা হলেন—মাতামুহুরী ২ নম্বর ওয়ার্ডের সুদে আলম, প্রকাশ লালু, আনোয়ার, মো. আলম, সৈয়দ আলম, নুরুল আমিন ও লতিফ। তারা এখনো কারাগারে বন্দি, যেকোনো সময় সত্যতা যাচাই করা সম্ভব।ডান্ডাবেরীর ভয়ংকর বাণিজ্য সম্প্রতি বিনা অপরাধেও কয়েদীদের ডান্ডাবেরী পরানোর নজির রয়েছে! ফেব্রুয়ারি মাসে কারা ক্যান্টিনের লভ্যাংশের হিসাব গরমিল থাকার অজুহাতে ক্যান্টিনের চিফ রাইটারসহ ছয়জনকে ডান্ডাবেরী পরিয়ে সেলে আটকে রাখেন জেলার। এদের কাছ থেকে আদায় করা হয় দশ লাখ টাকা! অথচ, ডান্ডাবেরী দেওয়া হয় সাধারণত দাগী আসামিদের, কিন্তু কক্সবাজার কারাগারে এটি পরিণত হয়েছে চাঁদাবাজির অস্ত্রে! ডান্ডাবেরী পড়ানো হয়েছিল—ক্যান্টিন ইনচার্জ মুন্না, খাইরুল আমিন, রহমান, শফি আলম, জাফর, পিসি ইনচার্জ সাদেক ও হাবিবকে। পরে পাঁচজনের শেকল খুলে দেওয়া হলেও সাদেক ও হাবিব এখনো শেকলে বন্দি। এখানে টাকার বিনিময়ে সব সুবিধা মিললেও, টাকা না থাকলে বন্দিদের ভাগ্যে জোটে নির্মম নির্যাতন।অভিযোগ আছে,কারাগারে হাসপাতালের সিট, খাবার, ফোনে কথা বলার সুযোগ—সবই এখন টাকার ওপর নির্ভরশীল। ওয়ার্ডে প্রথমবার ভর্তি হলে দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা, আর প্রতিদিনের সরকারি মোবাইল ডিউ ছাড়া কথা বলতে হলে গুনতে হয় ৫০০ টাকা প্রতি ১০ মিনিটে! নগদ টাকা থাকলে কক্সবাজার কারাগারে প্রতিদিনই কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়। কারা হাসপাতালে জেলারের নীরব সিট বাণিজ্য ও চিকিৎসা সেবা ব্যাহত:কারা হাসপাতালে অসুস্থ আসামি বা রোগী রাখার নিয়ম থাকলেও কক্সবাজার জেলা কারাগারে বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে হাসপাতালকে বানানো হয়েছে ইয়াবা কারবারি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জন্য বিশেষ সেবা কেন্দ্র। কারারক্ষী মিজান জেলার আবু মুছার কাছ থেকে মাসিক চুক্তিতে কারা হাসপাতাল পরিচালনা করছেন। হাসপাতালের আসন দখল করে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের রাখা হয় এবং প্রতিজনের কাছ থেকে মাসিক ১৫-২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। বর্তমানে কারা হাসপাতালে ৪০-৪৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাদের থেকে প্রথমবার ভর্তি হওয়ার জন্যও ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক মামলায় আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম চলছে। বড়-ছোট নেতাদের ক্ষেত্রে ২০-৫০ হাজার টাকা ভর্তি ফি নেওয়া হয় এবং পরে মাসিক সিট ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। যাদের সামর্থ্য কম, তারা ফ্লোরে থাকতে বাধ্য হন এবং সেখানেও মান্থলি ১০ হাজার টাকা দিতে হয়।চিকিৎসার দোহাই দিয়ে বন্দিদের সঙ্গে চরম অবহেলা করা হয়, যার ফলে প্রায়ই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু ঘটে এ কারাগারে। অভিযোগ রয়েছে, কারা হাসপাতালে কোনো স্থায়ী চিকিৎসক নেই। একমাত্র ফার্মাসিস্টই বন্দিদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বন্দিরা কখনো চিকিৎসকের দেখা পান না, শুধু ব্যথানাশক ওষুধ বা ইনজেকশন দেওয়া হয়।সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এক বন্দি গণসংযোগকে বলেন, “আমি কিডনির সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছিলাম। তিন দিন কারা হাসপাতালে থাকলেও কোনো চিকিৎসক পাইনি, শুধু ফার্মাসিস্ট ব্যথানাশক ইনজেকশন ও ট্যাবলেট দিতেন।”অন্য এক ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান বাবু বলেন, “অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে জেলার আবু মুছাকে অনুরোধ করলাম, স্যার আমাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠান। তিনি আমাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ‘মৃত্যুর আগে কোনো অসুস্থ বন্দি জেলখানার বাইরে যাবে না, কারণ এতে কারাগারের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে।’”কারা হাসপাতালের সামনে থাকা কারা ক্যান্টিনেও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। ন্যায্যমূল্যে খাবার সরবরাহের নিয়ম থাকলেও সেখানে ৫-১০ গুণ বেশি দামে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করা হয়, যা বন্দিদের জোরপূর্বক কিনতে বাধ্য করা হয়।তবে প্রথম রমজানে কারা ক্যান্টিনে টাকা দিয়ে খাবার জুটেনি। কারাগারে পরিদর্শক এলে বন্দিরা মেডিকেল থেকে পালিয়ে যান কেন? কারা হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা কারারক্ষী মিজান জেলার আবু মুছার অত্যন্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি। যেসব ইয়াবা ব্যবসায়ী কারা হাসপাতালে থাকেন, তাদের কাছ থেকে প্রতিজন অগ্রিম ২০-৫০ হাজার টাকা এবং মাসিক ১৫-২০ হাজার টাকা কারারক্ষী মিজানের নেতৃত্বে আদায় করা হয়। ফলে প্রকৃত অসুস্থ বন্দিরা হাসপাতালে জায়গা পান না।কারাগারে সরকারি কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা কারা মহাপরিদর্শক পরিদর্শনে আসলে, এসব ইয়াবা ব্যবসায়ী বন্দিদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে কিছু সময়ের জন্য অন্য ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। ফলে পরিদর্শকদের কাছে কারা হাসপাতালের অবৈধ কার্যক্রম ধরা পড়ে না।কারারক্ষী মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মার্চ 11, 2025 - 22:53
 0  7
জেলা কারাগার ডান্ডাবেরীর বাণিজ্য চরমে চুরির অপবাদে ৬ হাজতির ওপর বর্বর নির্যাতন:

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow