পূর্ব-পশ্চিম জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ দিবস আজ
আজ জার্মান পুনরেকত্রীকরণ দিবস। ৩৪ বছর আগের এই রাতেই বার্লিনে হাজার হাজার মানুষ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার মোড় অন্য দিকেও ঘুরতে পারতো। বার্লিনে রাইশসটাগ ভবনের উপরের রাতের আকাশে যখন আতশবাজির ফোয়ারা ছড়িয়ে পড়ল, তখন উপস্থিত প্রায় সবারই চোখে আবেগাশ্রু। তারা এমন এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পেলেন, যা শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মানুষও কখনো সম্ভব বলে মনে করেন নি। এক শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে সাবেক পূর্ব জার্মানির জনগণ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে শাসকদের ক্ষমতা থেকে তাড়িয়ে দেয়৷ একটিও গুলি খরচ হয় নি, কোনোরকম হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে নি, কারো কোনো ক্ষতি হয় নি। ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর জিডিআর বা জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের অংশ হয়ে যায়৷ জার্মানি আবার একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷ সেই সময়ের জার্মান প্রেসিডেন্ট রিশার্ড ফন ভাইৎসেকার সেদিন রাতে জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের সঙ্গে ইউরোপীয় সমন্বয় প্রক্রিয়ার যোগসূত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জার্মান হিসেবে আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন৷ এক ঐক্যবদ্ধ ইউরোপের কাঠামোর মধ্যে থেকে আমরা বিশ্বশান্তির জন্য কাজ করতে চাই। চ্যান্সেলারের দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন রুডল্ফ সাইটার্স। চ্যান্সেলার হেলমুট কোল’এর বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে প্রায় ১২ মাস ধরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন তিনি। ৩ অক্টোবর রাতে তিনিও ছিলেন বার্লিনে। রাতে তারও ঘুম হয় নি। তিনি বলেন, অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছে৷ চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগে পশ্চিম জার্মান দূতাবাসের বাগানে যে পূর্ব জার্মান শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের পশ্চিমে যাবার অনুমতি যোগাড় করতে আসরে নেমেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স ডিট্রিশ গেনশার। সেই আলোচনায় আমিও অংশ নিয়েছিলাম। জার্মান সংসদে আমি পুনরেকত্রীকরণ সম্পর্কে ভাষণ দিয়েছিলাম। ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর বার্লিন প্রাচীরের পতন থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৩২৯ দিন ছিল গোটা প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতাদের নানা জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অনেক সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়েছিল। বিশেষ করে পূর্বের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের কাজ মোটেই সহজ ছিল না। কেন্দ্রীয় শাসিত সমাজতান্ত্রিক এক রাষ্ট্রব্যবস্থা লুপ্ত হয়ে সেজায়গায় স্থাপিত হলো ফেডারেল বিকেন্দ্রিক এক কাঠামো। দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের বিষয়টি শুধু দুই জার্মানির রাজনৈতিক নেতাদের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল ছিল না। সাম্প্রতিক অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইউরোপের অনেক দেশে আবার এক পুনরেকত্রীত জার্মানিকে ঘিরে সন্দেহ ও আশঙ্কা দানা বাঁধছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার তো প্রায় বেঁকে বসেছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া মিতেরঁও একেবারে কোনো উৎসাহ দেখান নি৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য বিষয়টি ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ারশ জোটের ভবিষ্যৎ ও ন্যাটোর প্রভাব-প্রতিপত্তি কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছিল। ইতিহাসের সেই সন্ধিক্ষণে ভাগ্যও জার্মানির সহায় হয়েছিল। সেসময়ে বিশ্বের অন্য কোনো প্রান্তে অন্য কোনো বড় ঘটনা আন্তর্জাতিক সমাজের মনোযোগ কেড়ে নেয় নি। ফলে বিশ্ব নেতারা ইউরোপের হৃদয়ের এই অবিশ্বাস্য পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন।
আপনার অনুভূতি কী?