সাতক্ষীরায় ২০ হাজার টাকায় কন্যাশিশু বিক্রি!

মেহেদী হাসান শিমুল, সাতক্ষীরা থেকে: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এক নবজাতক কন্যাশিশু অর্থাভাবে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে। পরিবারিক অস্থিরতা, স্বামীর একের পর এক বিয়ে ও অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন শিশুটির মা আশামনি খাতুন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিশু খাদিজা খাতুনের পিতা শামীম হোসেন (২৮) একজন ডিপ টিউবওয়েল মিস্ত্রী ও কখনো ইটভাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তার একাধিক বিয়ের ইতিহাস রয়েছে। সর্বশেষ ১৮ এপ্রিল শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর এলাকায় পঞ্চম স্ত্রী হোসনেআরাকে নিয়ে রাত কাটাতে গেলে বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে ছুটে যান চতুর্থ স্ত্রী আশামনি খাতুন (২৫)। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলেও পালিয়ে যান পঞ্চম স্ত্রী। ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, শামীম হোসেন ২০১৬ সালে প্রথম বিয়ে করেন, এরপর একে একে সেনা সদস্যের স্ত্রী, নিজের চাচাতো বোন এবং আশামনিকে বিয়ে করেন। সর্বশেষে তিনি প্রেমের ফাঁদে ফেলে হোসনেআরাকে বিয়ে করেন। আশামনি খাতুন জানান, দ্বিতীয়বার কন্যা সন্তান গর্ভে ধারণ করলে শামীম তা মেনে নিতে চায়নি। গর্ভপাতের জন্য চাপ প্রয়োগ করে, এবং ব্যর্থ হয়ে সম্পর্কচ্ছেদ করে সব খরচ বন্ধ করে দেয়। চরম দারিদ্র্যের কারণে জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়ার পর আশামনি বাধ্য হয়ে ১৪ দিন বয়সী নবজাতক খাদিজা খাতুনকে তেঁতুলিয়া গ্রামের নিঃসন্তান দম্পতি চা বিক্রেতা রবিউল ও তার স্ত্রী কাজলের কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। লিখিত চুক্তি, স্বাক্ষী এবং স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই লেনদেন সম্পন্ন হয়। কাজল জানান, "আমরা দরদাম করে নিয়ম মেনে বাচ্চাকে নিয়েছি। জন্মনিবন্ধন ও টিকা কার্ডে আমরা নিজেদের নাম দিয়েছি। শিশুটির নাম রেখেছি ফারিয়া জান্নাতুল। সে আমাদের পরিচয়েই বড় হবে।" আশামনি খাতুন বলেন, “আমি এটা করেছি সন্তানের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য। অভাবের তাড়নায় আমি হেরে গেছি।” শামীম হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে থানায় একটি অভিযোগ দিলেও পরে আর কোনো উদ্যোগ নেননি। আশাশুনি থানার নবনিযুক্ত অফিসার ইনচার্জ সামছুল আরেফিন বলেন, “আমি চার দিন হলো যোগ দিয়েছি, এ বিষয়ে কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” এ ঘটনায় স্থানীয় সুশীল সমাজ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। উপসংহার: একটি কন্যা সন্তানের অপরাধ ছিল কি? জন্ম নেওয়া? এই সমাজব্যবস্থা, পুরুষতন্ত্র ও দারিদ্র্যের নির্মম বাস্তবতায় সে হয়ে উঠল বলির পাঁঠা। মানবিকতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। প্রশ্ন উঠছে—এভাবে আর কত?

Apr 21, 2025 - 18:00
 0  6
সাতক্ষীরায় ২০ হাজার টাকায় কন্যাশিশু বিক্রি!

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow