উপকূল ও সুন্দরবনের নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ডের সাহসিক পদচারণা।
মো. মিজানুর রহমান সাগর, বাগেরহাট প্রতিনিধি- প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দেশের উপকূলীয় ও নদীতীরবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, বনজ ও মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ এবং দুর্যোগকালে মানবিক সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষ করে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় তাদের কার্যক্রম জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন বিভিন্ন সময়োপযোগী কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের সেবায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমায় ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে ৯৫ জন ভারতীয় জেলেকে ৬টি বোটসহ ফেরত পাঠানো এবং ৯০ জন বাংলাদেশি জেলেকে দেশে ফিরিয়ে এনে পরিবারে হস্তান্তর করার ঘটনা মানবিকতা ও কূটনৈতিক দক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জলদস্যু ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কোস্ট গার্ড ৯০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩৯০ রাউন্ড গুলি, ১০টিরও বেশি বোমা ও ককটেলসহ ৮৫ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে। মাদকবিরোধী অভিযানে ৫ হাজার পিস ইয়াবা, ২৪ কেজি গাঁজা এবং ২০০টির বেশি বিদেশি মদ ও হুইস্কি জব্দ করা হয়। চোরাশিকার ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণে কোস্ট গার্ড ৮১ হাজার ভারতীয় বিড়ি, ৬৩৫ পিস কাঠ, ৬০০ কেজি হরিণের মাংস, ৮টি চামড়া ও ২০০টিরও বেশি ফাঁদসহ ২০ জন হরিণ শিকারিকে আটক করে। সেই সঙ্গে ১,০০০ কোটি টাকার অবৈধ জাল, ৩০০ কোটি টাকার রেণুপোনা, ২,৫০০ কেজি বিষাক্ত চিংড়ি এবং ১০,০০০ কেজি জাটকা জব্দ করে। মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে সমুদ্রে দুর্ঘটনায় পতিত ১৫০ জনের বেশি মানুষকে জীবিত উদ্ধার এবং সুন্দরবনে অপহৃত ৩৫ জন জেলেকে মুক্ত করা হয়। উপকূলীয় অঞ্চলে ২,০০০ এর বেশি দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিকে চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা, ভাসমান মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, এবং রমজানে গুদামে অভিযান পরিচালনা—সবমিলিয়ে কোস্ট গার্ডের এই সক্রিয় উপস্থিতি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার বাতিঘর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও নৌবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বন বিভাগ, মৎস্য ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে আইন-শৃঙ্খলা ও মানবিক সহায়তার কাজ অব্যাহত রাখবে—এমন প্রত্যাশা দেশের জনগণের।

আপনার অনুভূতি কী?






