দিন দিন পশ্চিম সুন্দরবনে  বেড়েই চলেছে হরিন শিকারীদের তৎপরতা, বনবিভাগের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন

এস কে সিরাজ, শ্যামনগর  থেকে।।পশ্চিম সুন্দরবনের আওতাধীন সাতক্ষীরা রেঞ্জের পুরো এলাকায় বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী থাকলেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে হরিণ শিকারিরা। প্রতিনিয়ত গভীর সুন্দরবন থেকে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করছে চক্রটি। সুন্দরবন থেকে এসব হরিণের মাংশ এনে বিক্রি করা হচ্ছে লোকালয়ে। বন বিভাগের কাছে শিকারীদের তালিকা থাকলেও কোন ভাবেই থামাতে পারছে না তাদের কার্যক্রম। ফলে বেড়েই চলেছে হরিণ নিধন। বন বিভাগের সহযোগিতায় মাছ ধরার পাশ নিয়ে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ অভয়ারণ্যে সহজেই প্রবেশ করে  অনেকেই হরিন শিকার করছে,তবে হরিন শিকারের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটলেই বিশেষ কোন  উদ্যোগ প্রসাশন বা বন বিভাগ নিতে পারিনি বলে সচেতন মহল মনে করেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পশ্চিম সুন্দরবনের কয়েকটি এলাকায় একাধিক চোরাশিকারি চক্র সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে। এদের একদল থাকে সুন্দরবনের ভেতরে, আরেক দল পরিবহন ও বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। চড়া দামে হরিণের মাংস বিক্রির জন্য ক্রেতাদের কাছে জীবন্ত হরিণ নিয়ে তাদের সামনেই জবাই করা হচ্ছে। আবার বনের মধ্যে জবাই করা হরিণের ছবি-ভিডিও অনলাইনে পাঠানো হচ্ছে বাইরের ক্রেতাদের কাছে। যে কারণে অনেকের কাছে হরিণের মাংসের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। সম্প্রতি, বনবিভাগরে কাছে ধরা পড়া এই চক্রের এক সদস্য আটক হওয়ার পর বেরিয়ে আসে ভয়াবহ এই তথ্য। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, বনবিভাগের কাছে হরিণ শিকারিদের ১০৮ জনের একটি তালিকা রয়েছে। তার মধ্যে কোবাদক স্টেশনে ৩০ জন, বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনে ৪২ জন, কদমতলা স্টেশনে ২০ জন, কৈখালী স্টেশনে ১৬ জন রয়েছেন। এই তালিকা ছাড়াও আরও অনেকে হরিণ শিকারের সঙ্গে জড়িত বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ক্রেতারা। পরিচয় গোপন রেখে অনলাইনে ক্রেতা সেজে চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা হরিণের মাংস দেওয়া যাবে বলে তারা জানান। এসময় প্রতিকেজি হরিণের মাংসের মূল্য চাওয়া হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। আর আস্ত একটি জীবিত হরিণের দাম চাওয়া হয় ১৫ হাজার টাকা। এ বিষয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা এলাকার বাসিন্দা মোঃ মিলন হোসেন, বলেন, আমাদের এলাকায় অনেকেই চোরাইভাবে বন থেকে হরিণ শিকার করে বিক্রি করছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে উল্টো তারাই সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে ফাঁসিয়ে দেয়। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় তাদের পক্ষে সহজেই এমনটা করা সম্ভব হয়। এজন্য সহসা তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলে না। সুন্দরবন সংলগ্ন বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের বাসিন্দা জেলে হাফিজুর  রহমান বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবন থেকে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে আসছে। সম্প্রতি গ্রামবাসীরা এই চক্রের এক সদস্যকে হরিণের মাংসসহ আটক করে বনবিভাগের কাছে দেয়। এরপর আমাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে।  এছাড়া স্থানীয় অনেকের কাছে তারা নিয়মিত হরিণের মাংস বিক্রি করে। বুড়িগোয়ালিনী এলাকার যুবনেতা মোঃ রুস্তম আলী বলেন, সুন্দরবন থেকে প্রতিনিয়ত হরিণ শিকারের কারণে সুন্দরবনের প্রাণি বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। অচিরেই যদি হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা যায় তাহলে অন্য অনেক প্রাণির মতো এই বন থেকে হরিণও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান বলেন, হরিণ শিকারিদের ধরতে সরকারিভাবে পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয়দের মাধ্যমে তথ্য পেলেই তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো হচ্ছে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে কয়েকজন হরিণ শিকারিকে আটক করে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জানুয়ারি 30, 2025 - 23:29
 0  1
দিন দিন পশ্চিম সুন্দরবনে  বেড়েই চলেছে হরিন শিকারীদের তৎপরতা, বনবিভাগের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow