শৈলকুপা কুমার নদে চলছে দূষণের মহোৎসব, কুম্ভকর্ণের ঘুমে কর্তৃপক্ষ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি— ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভেতরে প্রবাহমান কুমার নদ এখন যেন এক বিশাল ভাগাড়। স্থানীয় ক্লিনিক, হাট-বাজার, হোটেল আর রেস্টুরেন্টের মালিকরা যেন এর ভেতরে আবর্জনা ফেলার অবাধ লাইসেন্স পেয়ে গেছেন। প্রতিদিন টন টন বর্জ্য নদের জলে মিশে যাচ্ছে, আর নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন। নদের পাড় ঘেঁষা হাট-বাজারগুলো যেন দূষণ ছড়ানোর আখড়া। পচা সবজি থেকে শুরু করে গরু-ছাগল হাঁস- মুরগির নাড়িভুঁড়ি সহ গো-ঘাসি—সব কিছুই ফেলা হচ্ছে নদের পানিতে। ক্লিনিকগুলো তাদের বিপজ্জনক চিকিৎসা বর্জ্য পর্যন্ত ফেলতে দ্বিধা করছে না। হোটেল আর রেস্টুরেন্টের উচ্ছিষ্টে নদের জল কালো ও দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই দূষণে অতিষ্ঠ। এক সময়ের স্বচ্ছ জলের নদ আজ বিষাক্ত জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। মাছেরা মরে ভেসে উঠছে, আর দুর্গন্ধে টেকা দায়। এর পানিতে গোসল করে জনসাধারণ নানান রকম চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, স্থানীয়রা দূষিত পানি এড়িয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ, ঝিনাইদহের পরিবেশ অধিদপ্তরের টনক নড়ছে না। স্থানীয়রা একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল পাননি। মনে হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন। তাদের নির্লিপ্ততা দেখে মনে হয়, কুমার নদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথাই নেই। ক্ষুব্ধ এক বাসিন্দা সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, "পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কি শুধু অফিসে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে থাকার জন্য? এখানে দিনের পর দিন নদ দূষিত হচ্ছে, আর তারা চোখে ঠুলি পরে বসে আছেন? মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ইটভাটায় দায়সারা লোক দেখানো অভিযান চালিয়েই তাদের কর্ম সম্পাদন করে থাকেন" পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, এই লাগামছাড়া দূষণ শুধু পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনবে না, জনস্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি তৈরি করবে। দূষিত পানির কারণে এলাকার মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কুমার নদকে বাঁচাতে আর কতদিন নীরব থাকবে প্রশাসন? স্থানীয় মানুষজন অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন। যদি এখনই দূষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে কুমার নদ অচিরেই একটি মৃত এবং বিষাক্ত নর্দমায় পরিণত হবে, যার দায়ভার স্থানীয় প্রশাসনকেই নিতে হবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কুমার নদকে বাঁচাতে পরিবেশ অধিদপ্তর কবে সক্রিয় হবে? স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এবং নদকে দূষণমুক্ত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায়, এক সময়ের স্বচ্ছতোয়া কুমার নদ অচিরেই একটি মৃত জলাশয়ে পরিণত হতে পারে।

আপনার অনুভূতি কী?






