কেন রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় দ্বিগুণের বেশি?
রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র! পাবনার রুপপুরে এক হাজার বাষট্টি একর জমির ওপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটমের সাথে চুক্তি হয়েছিলো ২০১৬ সালে। ঠিক পরের বছর, ২০১৭-তে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পূর্ণ উৎপাদনে এলে এখান থেকে মিলবে ২ হাজার ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। দেশের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের খরচ এক লাখ পঞ্চান্ন হাজার কোটি টাকার-ও বেশি। তার মানে, প্রতি ইউনিটে কেন্দ্র নির্মাণ ব্যয় দাড়াচ্ছে ৬ লাখ ৮৯ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। মূল প্রকল্পের বাইরে, অবকাঠামো তৈরিতে খরচ আরো সাড়ে ২৪ হাজার কোটি টাকা। এসব ব্যয় ভারতে নির্মিত একই প্রযুক্তির পারমা্ণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, এখন-তো সবকিছুর একটা আদর্শ অনুশীলন রয়েছে। স্ট্যান্ডার্ডের থেকে বেশি দিলে, কেউ খেয়ে হজম করতে পারবে না। শুধু, রাষ্ট্র সেটিকে চিহ্নিত করে ঘোষণা দিতে হবে। আর সেই ডিক্লারেশন যদি থাকে, তাহলে আদালত থেকে সেটি আদায় করে নেয়া সম্ভব। ভোক্তার স্বার্থ খর্ব করছে, এমন কোন শক্তি এখন এই যুগে নেই। প্রতি ইউনিটে নির্মাণ ব্যয়ের হিসাব করলে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি খরচ হয় কেবল মাত্র যুক্তরাজ্যে। এশিয়ার সব দেশ তো বটে-ই; এমনকি ফ্রান্স ও রাশিয়ার চেয়ে বাংলাদেশের নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি। এসব ব্যয় তাই খতিয়ে দেখার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, ভারতের যেসব পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উদাহরণ দেয়া হয়, সেগুলোর থেকে অনেক বেশি ব্যয়বহুলভাবে বাংলাদেশে তৈরি করা হচ্ছে। যেটা কোন বিচারেই তুলনীয় নয়। কী কারণে আসলে এমন চুক্তিটি হয়েছে কিংবা আমাদের কী পরিমাণ অপচয় হচ্ছে, সেটা হয়তো খতিয়ে দেখা যেতে পারে। বুয়েটের প্রো উপাচার্য অধ্যাপক হাসিব চৌধুরী জানান, বিভিন্ন দেশের যে পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, সেগুলোর দিকে তাকালে, আমাদের দেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যয় অস্বাভাবিক রকমের বেশি। বিদ্যুৎ খাতের যে কমিশনটি এগুলো তদন্ত করবে, সেই কমিশনটিকে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রোজেক্টটি-ও দেখতে হবে। সেই সাথে তদন্ত করতে হবে, কেন এতো ব্যয়বহুল এই কেন্দ্র। উল্লেখ্য, বিশাল এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশই রাশান ঋণ। সেই ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে।
আপনার অনুভূতি কী?