ঘন্টার পর ঘন্টা শিক্ষার্থীদের রোদ-তাপে দাড়িয়ে রেখে অতিথিবরণ

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে ওলামা লীগ সভাপতির জাতীয় পতাকা উত্তোলন মো:মিজানুর রহমান সাগর বাগেরহাট প্রতিনিধি।।বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ধারায় যখন দেশ চলছে- তখন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদরের একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটেছে।  ঘন্টার পর ঘন্টা শিক্ষার্থীরা রোদ-তাপে দাড়িয়ে অসুস্থ হওয়ার পর অবশেষে অতিথিরা আসেন। এক মঞ্চে ইউএনওর পাশে থেকে ওলামা লীগের উপজেলা সভাপতি জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন। উপস্থাপক তৃপ্তির ঢেকুর তুলে নীতিবাক্যের বক্তব্য দিয়ে অতিথিদের নানা অলংকরণ-উপাধিতে ভূষিত করে মঞ্চে ডাকেন। ততক্ষণে ক্ষিদেয় অনেক শিক্ষার্থীর পেটে ব্যাথা শুরু হয়। মাথা ঘুরে মাটিতে বসে পড়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা। উপজেলার একমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ে অতিথি বরণের এমন অমানবিক ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা নির্বাহীসহ অনুষ্ঠানের অতিথিবৃন্দদের খুশি করতে আয়োজকদের সময়জ্ঞান বহির্ভূত এই অমানবিক আচরণ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। চিতলমারী সরকারি সামছুন্নেছা মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে দুইদিন ব্যাপি বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।  ৭ম শ্রেণি, ৮ম শ্রেণি, ৯ম, শ্রেণীসহ ভুক্তভোগী অন্যান্য শিক্ষার্থী জানায়, অনেক ইচ্ছে ছিল বিদ্যালয়ের দুইদিন ব্যাপি অনুষ্ঠানে অনেক আনন্দ হবে। কিন্তু এখন সব আনন্দ হারিয়ে গেছে। কারণ- সকাল ০৯টার আগে স্কুলে এসে অতিথিদের বরণ করার জন্য লাইনে দাড়িয়ে আছি। এখন বাজে প্রায় সোয়া ১১টা। কিন্তু ইউএনও কিংবা অতিথিদের দেখা নেই। আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে মাটিতে বসে পড়েছি। এই যদি হয় সময়ানুবর্তীতার শিক্ষা- তাহলে ভবিষ্যতে আমরা কেমন মানুষ হবো? ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, শুনেছি এই স্কুলের সভাপতি ইউএনও সাহেব। তিনিই যদি সময় মতো অনুষ্ঠানে না আসেন। আর ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা রোদে-তাপে অভুক্ত অবস্থায় দাড়িয়ে থেকে কষ্ট পাই- তাহলে কী শেখার আছে? কী করার আছে? আমরা তো অসহায়- একদিকে স্কুলের এই অনুষ্ঠানের নিয়ম অমান্য করলে খারাপ হবে। আরেকদিকে বাড়িতে বসেও থাকতে পারিনা।     ভুক্তভোগী ৭ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী  বলে, এই অনুষ্ঠানের চিঠিতে সকাল ০৯টায় শুভ উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। সেজন্য আটটার দিকে বাড়ি হতে শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে স্কুলে আসি। কিন্তু এখন ১১টা বাজে। অতিথিরা আসেননি। প্রচন্ড খিদেয় পেটে ব্যাথা করছিল। বার বার পানি খেয়েছি। আর সহ্য হচ্ছে না। এটাও এক ধরণের অত্যাচার।  প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাইকে বার বার অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আগমনের কথা ঘোষণা করেন বিদ্যালয়ের আওয়ামীঘেষা সহকারী শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান। এইকথা বলে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা শিক্ষার্থীদের রোদে-তাপে এসেম্বলী ও গেটের দুইপাশে দাড়িয়ে থাকতে নির্দেশনা দেন। এই অবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়া, বাংলাদেশ ওলামা লীগের চিতলমারী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ইদ্রিসুর রহমানকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ইউএনওর পাশে দাড়িয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধন করতে দেখা যায়। তখন উপজেলা বিএনপির কোন নেতৃবৃন্দকে দেখা যায়না। জানা যায়, এলাকার অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিকে কৌশলে বাদ রেখে এই অনুষ্ঠানসূচি তৈরী করেন, সহকারী শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান।  এই বিষয়ে চিতলমারী সরকারি সামছুন্নেছা মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মল্লিক বলেন, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে দুব্যর্বহার- কৌশলে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন, সরকারী অর্থ আত্মসাৎ, কোচিং বানিজ্য, গাইডবই বানিজ্য সহ অসংখ্য অনিয়ম রয়েছে। তার বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ বা অভিযোগ করলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে মিছিল সহ নানাভাবে লেলিয়ে দেওয়া হয়।  অভিযোগ বিষয়ে চিতলমারী সরকারি সামছুন্নেছা মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান এর কাছে জানতে ফোন দিলে তিনি পোন রিসিভ করেননি। এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার খান জানান, কত ঘন্টা ধরে শিক্ষার্থীরা দাড়িয়ে কষ্ট পাচ্ছিল সেটা তার জানা নেই। কোন শিক্ষার্থী অসুস্থতার বিষয়ে তাকে জানায়নি বলে জানান।  চিতলমারী সরকারি সামছুন্নেছা মেমোরিয়াল মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস পাল জানান, আমি এই বিষয় জানিনা কিছু তবে ব্যাবস্থা নিচ্ছি আমি

ফেব্রুয়ারি 11, 2025 - 21:07
 0  8
ঘন্টার পর ঘন্টা শিক্ষার্থীদের রোদ-তাপে দাড়িয়ে রেখে অতিথিবরণ

আপনার অনুভূতি কী?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow