যশোরসহ সারাদেশে হাসি নেই কৃষকের মুখে, সবজির দামে ধস
মোঃ শফিকুল ইসলাম যশোর ।।। যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজির দাম কমে যাওয়ার এই পরিস্থিতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। একটি টেকসই কৃষি উৎপাদনব্যবস্থা গড়ে তুলতে কৃষক, ব্যবসায়ী, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। শীতের মৌসুমে সবজির বাম্পার ফলনে সরবরাহ বাড়লেও বাজারে দামের মারাত্মক পতনে বিপদে পড়েছেন দেশের প্রান্তিক কৃষকরা। অধিক দামে সার, বীজ ও কীটনাশক কিনে সবজি উৎপাদন করলেও বিক্রির দামে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না তারা। এতে ভালো ফলনের পরও হাসি নেই কৃষকের মুখে, বরং অনেকেই খেত থেকে সবজি তুলতেও অনাগ্রহী। বৃহস্পতিবার (৯ই জানুয়ারি) যশোরের বড় বাজারের আংশিক নিত্যপণ্যের দর ছিলো আলু ৪০ পিয়াজ ৫০ কাঁচা মরিচ ৫০ শুকনা মরিচ ৫০০ রসুন ২৪০ আদা ১২০ সয়াবিন তেল ১৯৫ মোটা চাল ৫৫ মিনিকেট চাল ৬৫ বেগুন ৪০ টমেটো ৫০ লাউ ৩০ ফুলকপি-১ পিচ ১০ বাঁধাকপি-১ পিচ ১০ পোলট্রি মুরগি ২২০ টাকা। গত বছর সবজির ভালো দাম পাওয়ায় এবার বেশি চাষাবাদ করেছিলেন কৃষকরা। তবে অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম পড়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সবজি বাজারে নেওয়ার পরিবহন খরচই তুলতে পারছেন না কৃষক। ফলে কৃষিপণ্যের দামের এই অস্থিরতা দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে বাজার ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যের অভাবের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ নীতিমালা থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কার্যকর ব্যবস্থার অভাবে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিয়ে কৃষক ও ভোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাজারে একই পণ্য একাধিকবার হাতবদল হওয়া, পরিবহন খরচ এবং চাঁদাবাজির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম অসহনীয় হয়ে ওঠে। অথচ সেই মূল্য উৎপাদকের হাতে পৌঁছায় না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক এবং ভোক্তাও স্বস্তি পাচ্ছে না। কৃষকদের সুরক্ষা দিতে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। উন্নত জাতের বীজ, সারের সহজলভ্যতা ও সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে একটি ‘মূল্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, কৃষকদের সংগঠিত করে সমবায়ের মাধ্যমে সরাসরি বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করলে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো সম্ভব। একইসঙ্গে কৃষিপণ্যের বিকল্প ব্যবহারে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সরবরাহব্যবস্থার ঘাটতি পূরণ, বাজারে ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা এবং কৃষকের উৎপাদন খরচ ওঠানোর মাধ্যমে দেশের কৃষি অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব
আপনার অনুভূতি কী?