ঐতিহ্যের মুখে ধ্বংসের ছায়া: ঈদগাঁও খাল রক্ষায় জরুরি খনন ও কার্যকর পদক্ষেপ দাবি।
কক্সবাজার প্রতিনিধি এক সময়ের প্রমত্তা ও জীবন্ত নদী ঈদগাঁও খাল আজ মৃত্যুপথযাত্রী। স্রোতহীন, দূষিত এবং প্রাণহীন এ খাল হারিয়েছে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যবাহী প্রাণচাঞ্চল্য। দখল ও দূষণের নির্মম থাবায় ঐতিহাসিক এ জলাধার পরিণত হয়েছে বিষাক্ত ও দুর্গন্ধময় এক জলাশয়ে। স্থানীয়রা জানান, ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডের আশপাশের ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত খালে ফেলছেন প্লাস্টিক, শিল্পবর্জ্যসহ নানা ধরনের বিষাক্ত আবর্জনা। ফলে খালের পানি হয়ে উঠেছে ঘন কালো এবং বাতাসে ছড়াচ্ছে অসহনীয় দুর্গন্ধ। খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা জানান, এক সময় এ খালের পানিতেই তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো হতো। নৌ চলাচলের প্রাণ ছিল এই খাল। দুই পাড়ে ছিল কর্মচঞ্চল জনজীবন। আজ তা কেবলই স্মৃতি। ঈদগাঁও খাল শুধু একটি পানি প্রবাহ নয়; এটি এ জনপদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনিয়ন্ত্রিত বর্জ্য ফেলা, অবৈধ দখল এবং যথাযথ তদারকির অভাবে খালটির এ করুণ পরিণতি হয়েছে। স্থানীয় সাবেক জনপ্রতিনিধি নুরুল ইসলাম খালের দুর্দশায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "সময়ে ব্যবস্থা না নিলে ঈদগাঁও খাল চিরতরে হারিয়ে যাবে। অথচ এ খাল আমাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে রয়েছে।" তিনি দখল, দূষণ ও অবৈধ বালি উত্তোলন রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁও ব্রিজ এলাকা, পাল পাড়া, বাঁশঘাটা, চর পাড়া ও হিন্দু পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় খালের বুক দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি চলছে অবৈধ বালি উত্তোলন, যা পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তুলেছে। খালের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা বলেন, মৃতপ্রায় এ খাল রক্ষায় এখনই প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। সেই সাথে চাই পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। স্থানীয় পরিবেশবাদী ও সচেতন মহল বলছে, ঈদগাঁও খাল দখল ও দূষণের মাধ্যমে যেমন পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে, তেমনি জনস্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও এটি একটি বড় হুমকি। তারা দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও পরিবেশ রক্ষায় গণসচেতনতা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। উপজেলাবাসীর দাবি, ঈদগাঁও খাল রক্ষায় দ্রুত খনন এবং অবৈধ দখলমুক্ত করতে পরিবেশ অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি। "ঈদগাঁও খাল বাঁচাও, ভবিষ্যৎ বাঁচাও"—এ স্লোগানে তারা একত্রিত হয়ে রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছেন।

আপনার অনুভূতি কী?






